গরমে কি কি করতে হবে তা মুরগি মরার সময় ভেবে লাভ নাই।তাছারা এই সময় তেমন কিছু করার নাই। তবে কোম্পানী কিছু কাজ করতে পারে খাবার ফর্মুলেশনে পরিবর্তন এনে তবু তা অনেকটাই সম্বব না কারণ হঠাত করে তীব্র গরম শুরু হয় আবার কিছু দিনের মধ্যে কমে যায়।আবার শুরু হয় যা মেইন্ট্রেইন করা যায় না তবে যারা নিজেরা ফিড বানায় তাদের দ্বারা সম্বব।
গরমের জন্য ১ম যেকাজ টি করতে পারে এবং করা উচিত তা হল ফার্ম করার আগে সেড টি ঠিক মত ঠিক জায়গায় করা যা মুরগিকে ঠান্ডা রাখবে। আমাদের দেশে মুরগি মারা যাবার পর শুরু হয় সব কাহিনী যা আসলে তেমন কাজে আসেনা।
ক.ঘর ব্যবস্থাপনা
খ.পানি ব্যবস্থাপনা
গ.খাদ্য্ ব্যবস্থাপনা
ঘ.চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
ক. ঘর ব্যবস্থাপনা
এই ব্যবস্থাপনা হঠাত করে করা যায় না এটা শুরুতে করতে হয় মানে ঠিক করে হাউজিং এবং ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখতে হয়।
ঘর উত্তর দক্ষিণ মুখী হবে যাতে আলো বাতাস ভাল ঢুকে এতে বায়ুচলাচল ভাল হয়। ঝোপ ঝাড় ও গাছ পালা কেটে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘরের উচ্চতা ফ্লোর থেকে ৮-১০ফুট হলে ভাল হয়। স্থায়ী মাটি থেকে সেডের উচ্চতা ২-৩ ফুট হলে ভাল। ফ্লোরের চারপাশের দেয়ালের উচ্চতা ৪-৬ ইঞ্চির বেশি যাতে না হয়। সেডের নেট গুলি পরিস্কার করতে হবে যাতে বায়ু চলাচল ভাল হয়। সেড থেকে সেডের দূরত্ব ৩০ ফুট রাখা উচিত। টিনের ছাদের নিচে বাশ বা ইন্সোলেটর বা মোটা কাগজের বোর্ড দিয়ে বিকল্প ছাদ বানাতে হবে।তবে এতে ইদুরের সংখ্যা বেড়ে যায়।
পারলে ঘরে মুরগির সংখ্যা কমাতে হবে এবং পানির পাত্র বাড়াতে হবে। ঘরের জিনিস পত্র এমনভাবে সেট করতে হবে যাতে বায়ুচলাচলের সমস্যা না হয়। এগজস্ট এবং স্টেন্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্ট্যান্ড ফ্যান ব্রয়লারের জন্য ঠিক আছে কিন্তু খাচার ক্ষেত্রে তেমন ইফিক্টিভ না।
হালকা পানির স্প্রে করতে হবে। ঘরের ভিতর ছালা ভিজিয়ে রাখলেও ঘর ঠান্ডা থাকে,তাছাড়া যদি সম্বব হয় টিনের ছাদে চট বিছিয়ে সেখানে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলে ঘর ঠান্ডা থাকে।
ঘরের ছাদ ৩-৪ ফুট বাড়তি রাখলে সূর্যের আলো কম লাগবে.
চুন দিয়ে ছাদ এবং ফ্লোর লেপে দিলে ঘর ঠান্ডা থাকে।
টিনের উপর ঠান্ডা পানি স্প্রে করা যায়।মটর সিস্টেমে পানির লম্বা পাইপ টিনের উপর টিন বরাবর করে দিতে হবে এবং পাইপে ছিদ্র থাকবে যাতে পানি পড়ে.১ ঘন্টা পর পর মটর চালাতে হবে।টিনের উপর চট থাকবে ঠান্ডা বেশিক্ষণ থাকে।
গরমের সময় লিটারের উচ্চতা ১ইঞ্চির বেশি রাখা উচিত না বেশি রাখলে গরম বেশি হবে।
খ. খাদ্য ব্যবস্থাপনা
গরমে খাবার যেহেতু কম খায় সে কারণে খাবারটা এমন ভাবে বানাতে হবে যাতে খাবার কম মানে ৯০-১০০ গ্রাম খাবার খেয়ে ১২০ গ্রাম খাবারের ভিটামিন,মিনারেলস,এনার্জি ও প্রোটিন পায় ফলে প্রডাকশন ঠিক থাকবে।
আবহাওয়ার সাথে মিল রেখে খাবারের ফর্মুলা করা উচিত.৩-৪ মাস পর পর খাবারের ফর্মুলা চেঞ্জ করা উচিত।
সকাল এবং বিকালে ঠান্ডা সময় খাবার দিতে হবে,দুপুরে ২-৪ ঘন্টা অফ দেয়া যায়(তাপমাতার উপর নির্ভর করে).গরমে খাবার খেলে হজমের জন্য ৭% তাপ বেড়ে যায় যা ৪-৫ ঘন্টা থাকে।
যদি গরম ৩৫-৪০ ডিগ্রি হয় তাহলে ১২-৫ টা পর্যন্ত খাবার বন্ধ রাখতে হবে।
গরমের উপর নির্ভর করবে খাবার কতক্ষণ বন্ধ রাখতে হবে।
খাবার ভিজিয়ে দেয়া যায়, তবে তা যেন বেশিক্ষন না থাকে.
খাবারে এ্নার্জি কমাতে হবে কিন্তু ২৬০০ এর কম নয়,প্রোটিন না বাড়িয়ে মেথিওনিন ও লাইসিন বাড়াতে হবে,মিনারেলস( ক্যালসিয়াম,প্টাশিয়াম ও সোডিয়াম ক্লোরাইড,ফসফরাস এবং ভিটামিন্স( সি ও ই) বাড়াতে হবে.
বডিতে যাতে তাক কম তৈরি হয় সে জন্য ফ্যাট ০.5-1% বাড়িয়ে দেয়া হয়।
লাইসিনের ঘাটতি হলে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে তাই সয়াবিন বেশি দেয়া ভাল।
গরমকালে এনিম্যাল প্রোটিন বাদ দিয়ে/কমিয়ে উদ্ভিজ প্রোটিন ব্যবহার করা উচিত কারণ এতে তাপ কম তৈরি হবে।
বিটেইন এবং অর্গানিক ক্রোমিয়াম ব্যবহার করা যায় এতে বডিতে তাপ কম উতপাদন হবে।
গরমে অক্সিডেটিভ মেটাবলিজম দূর করার জন্য এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করা হয় যেমন ভিটামিন ই,সি,বি এইচ এ (BHA),বি এইচ টি(BHT) ই কিউ (EQ)
টক্সিন বাইন্ডার ব্যবহার করা কারণ গরমে খাবারে টক্সিসিটি বেশি হয়।
নিকারভাজিন ও মনেনসিন ব্যবহার না করা এতে পানি কম খায়।
গরমে ফসফরাস কিছুটা কমিয়ে ক্যালসিয়াম বাড়িয়ে দেয়া উচিত।
পিলেট খাবার দিলে বেশি খায়.তাছাড়া ম্যাশ খাবারে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।এতে ক্যালসিয়ামের শোষণ ভাল হয় না।
ক্যালসিয়াম খাবারে না দিয়ে লিটারে বা ফিডারে দিলে খাবার বেশি খায়।
খাবারে সি ২৫০ এম জি প্রতি কেজিতে বা ২০০-৪০০ গ্রাম /টনে দেয়া উচিত, এতে ধকল কমে যাবে.
এসিটাইল স্যালিসাইটিক এসিড ৬০-৪০০এম জি /লিটার
৫% খাবার পাত্র বাড়াতে হবে
গ.পানি ব্যবস্থাপনা
খাবার এবং পানির অনুপাত ১:২ কিন্তু ৯৫* গরমে তা ১:৪ হতে পারে.
বাচ্চা ছাড়া মুরগি ঠান্ডা পানি(১৭-২১*) পছন্দ করে.
গরমে মুরগির রক্ত ক্ষারীয় হয় তাই পানিতে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট ১গ্রাম /লিটার ও এমোনিয়াম ক্লোরাইড দেয়া উচিত।
গরমে পানিতে ৪% গ্লুকোজ দিলে রক্তের ভিস্কোসিটি ও অস্মোলারিটির ক্ষেত্রে তাপমাত্রার প্রভাব কম পড়ে।
গ্লোকোজ যত না তাপ তৈরি করে তার চেয়ে বেশি এনার্জি দেয় মুরগিতে।খাবার থেকে যে এনার্জি পায় তা তৈরিতে অনেল তাপ তৈরি হয় যা আরো বেশি রিক্স তাই রেডি মেড এনার্জির জন্য গ্লোকোজ মিশ্রিত ইলেকোলাইট/গ্লোকোজ দেয়া যায়।
পানিতে ভিটামিন ই দিলে লিপিড এর পার অক্সিডেশেনের ক্ষেত্রে এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ফলে তাপমাত্রার কুফল থেকে রক্ষা পায়।
গরমে শরীরে সি এর পরিমান কমে যায় তাই পানিতে সি দেয়া ভাল।
পানির সাথে বরফ দেয়া যেতে পারে.
২০-২৫ % ডিংকার বাড়িয়ে দেয়া উচিত
বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে লিটারেরে বা টিনের উপর পানি ছিটানো যাবেনা।
পানির পাইপ লাইন ঘরের উপর না দিয়ে মাটির ৪-৫ ফিট নিচ দিয়ে দিলে পানি ঠান্ডা থাকবে।
ঘরের বিভিন্ন স্থানে চটের বস্তা ভিজিয়ে তার উপর বড় ফ্যান দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করে ঘর ঠান্ডা রাখা যায়।
পানির ট্যাংকে বরফ দেয়া যায় এবং পানির ট্যাংক চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দেয়া উচিত।
গরমে পাখি বেশি পানি খালে লিটার বেশি ভিজে যায় তাই লিটারে চুন দিতে হবে এবং লিটার উল্টিয়ে দিতে হবে।
চলার/টিনের উপর তুলির ২পাশে ছিদ্রযুক্ত পাইপ (৪-৫ইঞ্চি পর পর পাইপের ২পাশে ছিদ্র করতে হবে) দিতে হবে যা মোটর দিয়ে চালাতে হবে.৩০-৪৫ মিনিট পর পর ৫-১০মিনিটের জন্য চালালেই হবে।
পানিতে সোডা,ইলেক্টোলাইট,বিটেইন,ক্রোমিয়াম পিকোলিনেট/প্রপায়নেট( Rena CR),স্যালাইন,সি,মেন্থল এর মধ্যে যে কোন একটি দেয়া যায়।
ঘ.চিকিৎসা
মুরগি হাপায়লে কার্বোনেট বের হয়ে যায় ফলে আয়নিক ইমব্যালেন্স হয়.
তাই পানিতে ইলেক্টলাইট এবং সি ব্যবহার করতে হবে এতে ডিমের খোসার মান এবং ইমোনিটি ভাল থাকবে.
কোন মুরগি অসুস্থ মনে হলে পানিতে চুবাতে হবে মাথা বাদ দিয়ে।
অধিক গরমে পুরো লিটার পালটানো উচিত নয় এতে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে।
সন্ধ্যা রাত্রে তাপমাত্রা কম রাখতে পারলে ভোরে বেশি খাবার খাবে।
পানিতে বিটেইন,ক্রোমিয়াম,মেন্থল দিতে হবে ।এতে হিট স্টেস কম হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৫ জুন ২০২১