দুধ এবং মাংস, এই দুই-এর জন্য দেশে ছাগলের চাহিদা প্রচুর৷ বিভিন্ন ধরণের ছাগলের পালন করা হয়৷ পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বাংলার ছাগল পালন করা হলেও এখন বিটল ছাগলের চাহিদাও বাড়ছে একটু একটু করে৷ বেশি পরিমাণে দুধ এবং মাংসের জন্য এই জাতের ছাগল পালনে উৎসাহ প্রকাশ করছেন পশুপালকেরা।
এদের শারীরিক গঠনের জন্য সহজেই এদের আলাদা করে চিনতে পারা যায়৷ এদের পা লম্বা, কান ঝোলানো প্রকৃতির৷ লেজও তুলনামূলকভাবে ছোট এবং এদের সিং মোড়ানো অবস্থায় থাকে৷ দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় এই জাতের ছাগল৷ এই জাতের ছাগল খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়।
বিটল ছাগলের পরিচিতি
১) এই জাতের ছাগলের পা ছোট হয়।
২) খাসি ও পাঠি উভয়ের শিঙ থাকে।
৩) এই জাতের ছাগলের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি হয়।
৪) সব ধরণের পরিবেশে এই জাতের ছাগল পালন করা যায়।
ছাগল পালন পদ্ধতি: বাণিজ্যিকভাবে মাংস উৎপাদনের খামারে বিটল ছাগল পালন করা হয়। এই জাতের পালন করা খুবই সহজ। এই জাতের ছাগল কষ্ট সহিষ্ণু ও রোগ প্রতিরোধী। সব ধরণের আবহাওয়ায় এই জাতের ছাগল পালন করা যায়। ছেড়ে দিয়ে পালন করার পাশাপাশি আবদ্ধ ও ষ্টার ফিডিং পদ্ধতির দ্বারা ছাগল পালন করা যায়। পারিবারিক বা ছোট খারামের গুলিতে খুব সহজেই বিটল জাতের ছাগল পালন করা যায়।
খাদ্য: এই জাতের ছাগল সাধারণত ঘাস ও পাতা খেয়ে থাকে। এর জন্য বিশেষ কিছু খাদ্যের প্রয়োজন হয়না, সাধাণ ছাগল যা যা খেয়ে থাকে সেটাই যথেষ্ট। তবে, বেশি ভালো বৃদ্ধির জন্য সুষম দানাদার খাদ্য দেওয়া যেতে পারে। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করতে হবে। ছাগলের শরীরে যেন কোনো মিনারেল বা ভিটামিনের অভাব না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস ও পাতা খেতে দিতে হবে। এদের দুগ্ধ প্রদানের ক্ষমতা দৈনিক গড়ে প্রায় ২.৫ কিলোর বেশি৷ ছেলে বিটল ছাগলের ওজন প্রায় ৫০-৬০ কিলো হয় এবং মেয়ে বিটল ছাগলের ওজন প্রায় ৩৫-৪০ কিলো পর্যন্ত হয়৷ মূলত খাদ্য হিসেবে চারা ব্যবহার করা হয়৷ এরা প্রায় সব ধরণের গাছপালা, পাতা, ঘাস খেয়ে থাকে৷ তবে বেশি দুধ এবং মাংসের জন্য সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে এদের।
প্ৰজনন ক্ষমতা: এই জাতের ছাগল বছরে ১ বার বাচ্চা প্রদান করে। এই ছাগল দিনে ৩-৪ লিটার দুধ দিতে পারে। প্রায় ২ বছর বয়সে এই জাতের ছাগল প্রথমবার বাচ্চা প্রদান করে থাকে।
এই জাতের ছাগল আকারে বড় ও দেখেত সুন্দর হওয়ায় সব দেশেই বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। পশুপালকদের কাছে এই জাতের ছাগলের ব্যাপক চাহিদা আছে। এই জাতের একটি পাঠা প্রায় ১ লাখ দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, একটি পুরুষ বিটল ছাগল ১২-১৫ মাসে পরিপক্ক হয়ে ওঠে এবং মেয়ে বিটল ছাগল ২০-২২ মাসে প্রথম বাচ্চা দেওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছয়৷ এই ছাগল ভারত এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে দেখতে পাওয়া যায়৷ এরা যে কোনও ধরণের আবহাওয়াতেই নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে এবং দুধ উৎপাদন ক্ষমতা যেমন এদের বেশি, তেমনই বেশি মাংসের জন্য এদের বাণিজ্যিক মূল্যও বেশ চড়া৷ তাই পশুপালকদের কাছে ধীরে ধীরে এই জাতের ছাগলের চাহিদা বাড়ছে৷
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৮ জুন ২০২১