যারা অধিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন গরু পালন করেন তারা প্রায়ই দুধে ফ্যাটের পরিমাণ ও ঘনত্ব নিয়ে বিক্রেতার কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হন। যদিও ফ্যাটের পরিমাণ গরুর জাতের উপর নির্ভরশীল তারপরও নানা কারণে ফ্যাটের পরিমাণ কমে যেতে পারে। নিন্ম লিখিত বিষয় গুলো মেনে চললে দুধের ফ্যাট ও ঘনত্ব বৃদ্ধি সম্ভব:
√দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যেমন পুষ্টকর খাবার প্রয়োজন তেমনি ফ্যাট বৃদ্ধির জন্য সুষম পুষ্টকর খাবার অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে দানাদার খাবারে কমপক্ষে ১৬% প্রোটিন থাকতে হবে।
√রুমেন এর ph কমে গেলে অর্থাৎ ৬ এর চেয়ে কম হলে দুধ উৎপাদন ও ফ্যাট উভয়ই কমে যেতে পারে। রুমেন ph কমে যাওয়ার মূল কারণ হল খাবারে অতিরিক্ত স্টার্চ ও সুগার থাকা। রেশনের ৩০-৫০% এর বেশি স্টার্চ ও সুগার দেওয়া উচিত নয়। এতে স্টার্চের গাঁজন প্রক্রিয়ার জন্য রুমেন ph কমে যেতে পারে। তাই দানাদার খাবার দিনে দুই তিনবার নির্দিষ্ট সময়ে প্রদান করুন।
√রেশনে কমপক্ষে ২৩% ফাইবার থাকতে হবে। কারণ ফাইবার ভেঙ্গে ফ্যাটি এসিড তৈরি হয় যা ফ্যাট বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খড় ও কাঁচা ঘাস অাঁশের উত্তম উপকরণ।
খাবারের মধ্যে ৫-৬% ফ্যাট থাকা উচিত। তবে রেশনের ২% এর চেয়ে কম Unsturated ফ্যাট থাকতে হবে। নাহলে দুধে ফ্যাট কমে যেতে পারে। সেই জন্য ভাল মানের নারিকেলের খৈল ব্যবহার করা যেতে পারে কারণ এতে সবচেয়ে বেশি ৯১% Saturated ফ্যাট থাকে।
√রুমেন এ Na, K, S, Cl এর অ্যানায়ন ক্যাটায়ন পার্থক্যের কারণে ফ্যাট কমে যেতে পারে।ক্যাটায়ন মান +২৫ থেকে +৪০ পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল। নারিকেলের খৈলে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম (K) থাকে যা DCAD মান কে ধনাত্নক রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া চিটাগুড় এ থাকা প্রচুর সালফার DCAD মান ঋনাত্নক করে যা দুধের ফ্যাট কমিয়ে দেয়। তাই চিটাগুড় কম বা না খাওয়ানো উচিত।
√প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনের জন্য ১.৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। ক্যালসিয়ামের সল্পতার কারণে দুধের ঘনত্ব কমতে পারে এবং গরুর মিল্ক ফিভার হয়ে মারা যেতে পারে। তাই রেশনে পরিমান মত ক্যালসিয়াম যোগ করতে হবে। তাছাড়া ড্রাই ম্যাটারের ০.৩৫% ক্লোরাইড থাকলে দুধের ফ্যাট ও ঘনত্ব কমে যেতে পারে। তাই পরিমাণের বেশি লবন দেওয়া যাবেনা।
√ডাল জাতীয় খবারে প্রচুর অায়রন থাকে। তাই পরিমান মত খাওয়াতে হবে। বেশি হলে অায়রন টক্সিসিটি হয়ে দুধ ও ফ্যাট উভয় কমে যেতে পারে।
সর্বশেষ বলা যায় উপরোক্ত বিষয় গুলো মেনে চললে দুধের ফ্যাট বৃদ্ধি পাবে। তবে অনেক সময় ফ্যাট বৃদ্ধি পেলে দুধ উৎপাদন কমে যেতে পারে।তাছাড়া উচ্চ অাঁশযুক্ত খাবারের শক্তি কম থাকে এবং লিগনিন বেশি থাকে। তাই খাবার খরচ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। সবমিলিয়ে উত্তম ও সঠিক TMR দ্বারা দুধের উৎপাদন, ফ্যাট, ঘনত্ব, প্রোটিনসহ সকল পুষ্টমান ঠিক রাখা সম্ভব।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
ডাঃ মোঃ শাহীন মিয়া
ভেটেরিনারি অফিসার বিজিবি
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১২ জুলাই ২০২১