পাতা কোকড়ানো মরিচ গাছের খুবই মারাত্মক একটি রোগ। যদি পাতা গুলো উপরের দিকে নৌকার মত কুঁকড়ে যায় তবে এটা ভাইরাস এবং যদি নিচের দিকে কুঁকড়ে যায় তবে এটি মাকড়ের আক্রমণে হয়।
ভাইরাস আক্রমনের লক্ষণ সমূহ
১. আক্রান্ত পাতা উপরের দিকে নৌকার মত কুঁকড়ে যায়। পাতার নিচে হলুদ শারীরে সাদা পাখাওয়াল মাছি(সাদা মাছি) দেখা যায়।
২. পুরোনো পাতাগুলো শক্ত ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
৩. পাতার মাঝের শিরাগুলো হালকা হলুদ হয়ে যায়।
৪. গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
৬. দেখতে মনে হয় থ্রিপস বা মাকড়ের আক্রমণ হয়েছে।
৫. ফলন কমে যায় ও এবড়ো থেবড়ো হয়।
৭. পাতাগুলো ছোট গুচ্ছাকৃতির হয়।
৮. গাছে অতিরিক্ত ডালপালা জন্মায় ও ঝোপের মতো হয়।
রোগের বিস্তার
এ ভাইরাটি সাধানণত বীজ থেকে ছড়ায় না। এই ভাইরাসটির নাম Begomo ভাইরাস। এটি সাদা মাছি, থ্রিপস, সংক্রমিত চারা ও আগাছা থেকে ছড়ায়। সাধারাণত সাদা মাছি গুলো তখন পাতার নিচের দিকে থাকে, এরা ১.৫ মিমি লম্বা হয় এবং হালক হলুদ শরীরে সাথে মোম আবৃত সাদা পাখা থাকে। এছাড়া এটি আরো বিভিন্ন কারনে এ ভাইরাস ছড়ায়, যেহেতু এটি ভাইরাস তাই এটি সাধারণ ভাইরাসের মত সংক্রমিত হয়, যেমন বৃষ্টি, পানি, আগাছা, নার্সারি থেকে কোন গাছের মাধ্যমে ইত্যাদি।
প্রতিষেধক
এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক নেই। এই ভাইরাসে আক্রন্ত গাছ যত তারাতারি সম্ভব তুলে পুড়িয়ে বা মাটিতে ফুতে ফেলতে হবে।
জৈবিক প্রতিরোধ
মরিচ গাছ লাগানোর সময় থেকে প্রতি ১০-১৫ অন্তর অন্তর নিম তেল স্প্রে করুন। প্রতি লিটার পানিতে ১-২ টেবিল চামচ নিম তেল ও ১-২ চা চামচ ডিশ ওয়াশ ভাল করে মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
রাসায়নিক প্রতিরোধ
রাসায়নিক নিয়ন্ত্রন পদ্ধতিতে অনেক উপকারি পোকার ক্ষতি হয় তাই জৈবিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন। রাসায়নিক নিয়ন্ত্রনের জন্য ডিনোটফুরান বা ইমাডাক্লোরোপিড জমিতে চারা রোপনের পূর্বে চারাতে ছিটিয়ে দিন। যদিও এ ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকর কোন প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক নেই।
মাকড়ের আক্রমণের লক্ষণ
১. হলুদ মাকড়ে আক্রান্ত পাতা নিচের দিকে কুঁকড়ে যায়।
২. লাল মাকড় আক্রান্ত পাতা নিচের দিকে কুঁকড়ে যায় ও পাতার নিচে সাদা জাল বুনে।
জৈবিক প্রতিকার
১. আক্রমণ কম হলে নিম তেল প্রতি ১ লিটারে ১-২ টেবিল চামচ ও ডিশ ওয়াশ ১-২ চা চামচ করে প্রতি ১০ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে নিম তেল ও ডিশ ওয়াশের মাত্রা বাড়াতে হবে।
২. ৫ গ্রাম তামাক পাতা বা সাদা পাতা ১০০ মিলি পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে ছেকে নিয়ে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন স্প্রে করতে হবে।
রাসায়নিক প্রতিকার
১. থিউভিট/ রনোভিট(সালফার ৮০%) ২গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৩- ৫ দিন স্প্রে করতে হবে।
২. ডাইমেথয়েট (টাফগর ৪০ ইসি)
প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা
১. ভাইরাস প্রতিরোধী ও সুস্থ বীজ থেকে চারা তৈরি করুন ও শুধুমাত্র সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করুন।
২. নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করুন।
৩. রোগাক্রন্ত চার কোনভাবেই লাগাবেন না।
৪. সাদা মাছি প্রতিরোধে হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করুন।
৫. ভাইরাস আক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে বা মাটিতে ফুতে ফেলুন।
৬. চারা অবস্থায় বীজতলা মশারি বা নেট দিয়ে ডেকে রাখতে হবে।
আমাদের বাড়ির বারান্দা বা ছাদে শখ করে নানানরকমের গাছ লাগিয়ে থাকি। কিন্ত প্রায় সময়ই দেখা যায় আমাদের শখের গাছ গুলোর পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে, পাতা ঝরে পড়ছে, পুরো গাছ নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে। এত পরিচর্যার পরও দেখা যায় গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৭সেপ্টেম্বর ২০২১