কাসাভার জাত: কাসাভার অনেকগুলো প্রচলিত ও উন্নত জাত রয়েছে। কৃষকরা খাবার ও বানিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যের ভিত্তিতে জাত নির্বাচন করে থাকে। খাবারের জন্য অনেক অঞ্চলে মিষ্টি জাতের কাসাভা চাষ করা হয়।
কাসাভার পুষ্টিগুণঃ কাসাভায় সাধারনভাবে ৩০-৪০ ভাগ শর্করা , ১-২ ভাগ প্রোটিন, এবং ৫৫-৬০ ভাগ জলীয় অংশ বিদ্যমান । আলুর তুলনায় কাসাভাতে দ্বিগুনেরও বেশী শর্করা থাকায় ইহা আলুর চেয়ে আনেক বেশী পুষ্টিকর । যেখানে আলুতে ১৮ ভাগ শর্করার মাত্র ১৬.৩ ভাগ স্টার্চ হিসাবে থাকে সেখানে কাসাভার ৪০ ভাগ শর্করার ৯০ ভাগই স্টার্চ হিসাবে থাকে । এছাড়াও কাসাভাতে ক্রুড ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ভিটামিন সি উল্লেখযোগ্য পরিমানে পাওয়া যায়।
কাসাভার রোগ প্রতিরোধ গুনাগুণঃ কাসাভার আঠালো অংশ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ উপশমের ক্ষেত্রে কাজ করে। কাসাভা ফাইবার বাড়তি কোলেস্টরলের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করে। এমনকি এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
কাসাভা চাষ পদ্ধতিঃ উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল কাসাভা চাষের উপযোগী। অনুর্বর পাহাড়ি মাটি কিংবা বালিমাটি যেখানে অন্য কোনো ফসল ফলানো যায় না সেখানেও কাসাভা চাষ করা যায়। তবে এ ফসল জলাবদ্ধতা ও উচ্চ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না।
জলবায়ুঃ এটি একটি খরাসহনশীল ফসল। যেখানে ছয় মাস পর্যন্ত খরা বা শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করে সেখানেও কাসাভা সহজে চাষ করা যায়। তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে কাসাভা ভালো হয় না। উপযুক্ত তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৩০০ মিটার ওপরেও কাসাভা চাষ করা যায়।
বংশবিস্তারঃ গাছ লাগানোর জন্য বীজ কিংবা কাটিং উভয়ই ব্যবহার করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য পরিপক্ব কাণ্ডের কাটিং ব্যবহার করা হয়। কাসাভা সংগ্রহের সময় সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত কাণ্ডগুলো কেটে পরবর্তী বছর লাগানোর জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হয়। লাগানোর সময় কা-কে ১৫-২০ সেমি করে কেটে সোজা করে লাগাতে হবে। প্রতিটি কাটিংয়ে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭টি নোড থাকতে হবে।
জমি তৈরিঃ সাধারণত জমিতে চাষের প্রয়োজন হয় না। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য জমি চাষ করা যেতে পারে। অধিকাংশ জায়গায় পিট তৈরি করে কাসাভার কাটিং বা সেট লাগানো হয়। পাহাড়ি এলাকায় এটি একটি সহজ ও সুবিধাজনক পদ্ধতি। তবে পিটগুলো মাটি থেকে একটু ওপরের দিকে উঠানো হলে ফলন ভালো পাওয়া যায়।
গাছ লাগানোর নিয়মঃ প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ হাজার গাছ লাগানো যায়। একটি গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব ৭৫ থেকে ৯০ সেমি রাখতে হবে। কাটিং মাটিতে লাগানোর সময় ২০ সেমি মাটির নিচে এবং ৫ সেমি মাটির ওপরে থাকতে হবে। সাধারণত ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাটিং থেকে নতুন কুশি বের হয়। যেসব কাটিং থেকে কুশি বের হবে না সেগুলো তুলে ফেলে সেখানে ৪০ সেমি আকারের নতুন কাটিং লাগাতে হবে।
গাছ লাগানোর সময়ঃ সারা বছরই গাছ লাগানো যায়। তবে সাধারণত বর্ষার শুরুতে কাসাভার কাটিং লাগানো ভালো। আমাদের দেশে এপ্রিল-মে মাস কাসাভা লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
সার ব্যবস্থাপনাঃ তেমন কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি ১৮০-২০০ কেজি নাইট্রোজেন, ১৫-২২ কেজি ফসফরাস ও ১৪০-১৬০ কেজি পটাসিয়াম প্রয়োগ করলে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়।
সেচঃ সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে কাটিং লাগানোর পর গাছ গজানোর জন্য ৩-৫ দিন অন্তর কমপক্ষে দুবার সেচ দিতে হবে। দীর্ঘদিন খরা অবস্থা বিরাজ করলে হালকা সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে ফলন বৃদ্ধি পায়।
আন্তঃপরিচর্যাঃ গাছ লাগানোর পর ১ মাস অন্তর গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে গোড়ায় মাটি তুলে দিলে ফলন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। যদিও কাসাভায় রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ খুবই কম তথাপিও এক ধরনের মাকড়ের আক্রমণে অনেক সময় ফসলের ক্ষতি হয়। সব সময় রোগবালাই ও পোকামাকড় মুক্ত কাটিং লাগাতে হবে এবং মাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে হলে আক্রমণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। অনেক সময় ইঁদুর মাটির নিচের কাসাভা খেয়ে বেশ ক্ষতি করে। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ও বিষটোপ ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করতে হবে।
কাসাভার সাথে আন্তঃফসল চাষঃ আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার ৯০ ভাগ কাসাভা জমিতে আন্তঃফসল হিসেবে ডালজাতীয় ফসল ও শাকসবজি চাষ করা হয়। ভারতে কাসাভার সঙ্গে আন্তঃফসল হিসেবে শিম, চীনাবাদাম, মটর, পেঁয়াজ ও শাকসবজি চাষ করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় কাসাভার সঙ্গে ধান ও ভুট্টা চাষ করা হয়। মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে নারকেল, পাম অয়েল ও রাবার বাগানে আন্তঃফসল হিসেবে কাসাভা চাষ করা হয়। আন্তঃফসল চাষের কারণে কাসাভার ফলনের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এ ক্ষেত্রে গাছের ঘনত্ব কিছুটা কমিয়ে দিলে চাষে সুবিধা হয়।
ফলনঃ গাছপ্রতি ১৫-১৮ কেজি ফলন পাওয়া যায়। সাধারণত হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ টন ফলন পাওয়া যায়। তবে ভালো ব্যবস্থাপনায় উন্নত জাত চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১