কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য

898

কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম: আদি কাল থেকে অগ্রহায়ণের ১ তারিখে বাঙালিরা নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে। প্রথা অনুযায়ি নতুন ধান কেটে সে ধানের পিঠা পায়েস দিয়েই বরণ করে নেয়া হয় এ দিনটিকে। মাঠে নতুন প্রযুক্তির সফল ব্যবহারের ফলে বর্তমানে নবান্ন উৎসব শুরু হচ্ছে সেই কার্তিক মাস থেকেই। মরা কার্তিক আজ ভরা কার্তিকে পরিণত হয়েছে। কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরি প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম।

বর্তমান সরকারের পরপর দুই মেয়াদে চার দফায় সারের দাম কমানো হয়। ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় এবং সেইসাথে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। বর্তমান সরকারের পরপর দু’মেয়াদে সার্বিক কৃষিখাতে প্রতিবছর ৩.৯ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন, যার মধ্যে আউশ ২৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন, আমন ১ কোটি ৩৩ লাখ মেট্রিক টন, বোরো ১ কোটি ৮৭ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন, গম ১০ লাখ ৩৬ হাজার ও ভুট্টা ২০ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন। আশা করা হচ্ছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতেও এ খাতে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

সরকার কৃষকদের সম্ভাব্য সব রকম উপকরণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রবর্তিত কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেশে ও বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের অনুসরণে ভারত সরকার কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হারভেস্টরসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। কৃষি পুণর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবারহ অব্যাহত রয়েছে। আউশে প্রণোদনা প্যাকেজও অব্যাহত আছে। কৃষিতে ভর্তুকি দেয়ার ফলে প্রতিবছর খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে এবং কৃষকের বাম্পার ফলন ফলানো সম্ভব হয়েছে। ভর্তুকি অর্থের বৃহৎ অংশ রাসায়নিক সার, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচের পানি ও কৃষি পুনর্বাসন খাতে খরচ করা হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে ভর্তুকি হচ্ছে সরকারের বিনিয়োগ। ভর্তুকি প্রদানের ফলে প্রতিবছরে ধানের উৎপাদন লক্ষমাত্রার চেয়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টন বেশি হচ্ছে।

নতুন নতুন জাতের ধান ও গম উদ্ভাবন এবং কৃষি জমির আওতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্যশস্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সর্বোচ্চ প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। কৃষি গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। কৃষি খাতকে শক্তিশালী ও সুসংহত করার জন্য কৃষিবীমা প্রবর্তন, কৃষি বিপণন দল ও কৃষক ক্লাব গঠন, চিনির বিকল্প হিসেবে সুগার বিট চাষের প্রবর্তন, জাতীয় কৃষিনীতির প্রবর্তন এবং পাটের নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ চলছে। বর্তমান কৃষি নীতিতে কৃষি সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। সরকারের যুগোপোযোগি পরিকল্পনা, পরিশ্রমি কৃষক এবং মেধাবি কৃষি বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণবিদদের যৌথ প্রয়াসেই এ সাফল্য। স্বাধীনতার পর দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন চাল উৎপাদিত হতো। এখন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে চার টনেরও বেশি। ধান ধরে হিসাব করলে তা ছয় টন। তাছাড়া হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদনে বিশ্বে গড় ৫ দশমিক ১২ টন। বাংলাদেশে এ হার ৬ দশমিক ৯৮ টন। খাদ্যশস্যে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩৪ টন উৎপাদন করে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের পরে রয়েছে আর্জেন্টিনা, চীন ও ব্রাজিল। আর এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনের দিক থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলার কৃষকরা এখানেই থেমে যাননি। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য উদাহরণ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে।

ধানবাংলাদেশ চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। আমন, আউশ ও বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। কৃষির এ সাফল্য সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় তিন টন। আর বাংলাদেশে তা ৪ দশমিক ১৫ টন। বাংলাদেশ এখন চাল, আলু ও ভুট্টা রফতানি করছে। গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ শ্রীলংকায় প্রথমবারের মতো চাল রফতানি শুরু করে সরকার। দু’দফায় প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করা হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক ৬ মে ২০১৫ বাংলাবান্ধা বন্দর দিয়ে ভয়াভয় ভুমিকম্প কবলিত নেপালে ১০ হাজার মে. টন চাল সাহায্য হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এটা দেশের চাল উৎপাদনের সামর্থ্যরেই বহিঃপ্রকাশ।

সবজিদেশ আজ সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। দেশে রীতিমতো সবজিবিপ্লব ঘটেছে গত এক যুগ ধরে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একসময় দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই কেবল সবজির চাষ হতো। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে। এখন দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে এক কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে, এ কৃষক পরিবারগুলোর প্রায় সবাই কমবেশি সবজি চাষ করেন। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার স্ট্যাটিসটিক্যাল ইয়ারবুক-২০১৩ অনুযায়ি, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে বাংলাদেশে, বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ। পাশাপাশি একই সময়ে সবজির মোট উৎপাদন বৃদ্ধির বার্ষিক হারের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে ২০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে দেশে মাথাপিছু দৈনিক সবজি খাওয়া বা ভোগের পরিমাণ ছিল ৪২ গ্রাম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) হিসাবে, গেলবছর দেশে মাথাপিছু সবজি ভোগের পরিমাণ হয়েছে ৭০ গ্রাম। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসেবে, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রফতানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আর কৃষিজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবজির রফতানি বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রফতানি বেড়েছে ৬০ শতাংশ।

মাছমাছ উৎপাদনে চতুর্থ বাংলাদেশ। একসময় ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ কথাটি বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা বাস্তব। মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মাছ রফতানি বেড়েছে ১৩৫ গুণ। এফএও পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাছের উৎপাদন ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের হিমায়িত মৎস্য রফতানির পরিমাণ ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে চার হাজার ১৪৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। জাটকা সংরক্ষণসহ নানা উদ্যোগের ফলে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ ইলিশের উৎপাদন ৫২ হাজার টন বেড়ে সাড়ে তিন লাখ টন হয়েছে। মাছের দাম সাধারণ ক্রেতার সামর্থ্যরে মধ্যে থাকায় গত দশ বছরে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ শতভাগ বেড়েছে।

ব্লাক বেঙ্গল ছাগলছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ। আর ছাগলের মাংস উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম। বাংলাদেশের ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল বিশ্বের সেরা জাত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

 

 

 

 

 

আমআম উৎপাদনে সপ্তম বাংলাদেশ। বিশ্বে মোট আম উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ফলটির উৎপাদনে শীর্ষ দশে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। গত দু’বছরে প্রায় দশ লাখ টন আম উৎপাদনের মাধ্যমে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ মূল্যায়নে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৮১ হাজার টন। সেখানে ২০১১-১২ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টনে উন্নীত হয়। দেশে প্রায় দেড় কোটি আম গাছ রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলাতে ৬৬ শতক এলাকাজুড়ে রয়েছে এশিয়ার ঐতিহাসিক আম গাছ ‘লতা সূর্যাপুরী’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট গত মে ২০১৫ হতে বাংলাদেশের আম কিনতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের আ¤্রপালি ও ল্যাংড়া আম বিলেতে অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

আলুআলু উৎপাদন সাফল্যের এক বিস্ময়। এক দশক আগেও উৎপাদন ছিল অর্ধ লাখ টনের নিচে। এখন তা এগোচ্ছে কোটি টনের দিকে। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দশ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। বাংলাদেশ রয়েছে অষ্টম স্থানে। উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই কেবল নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। মাধ্যম হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও। অথচ এর আগে বিশ্বের ২০টি দেশ থেকে বাংলাদেশকে আলু আমদানি করতে হতো।

প্রতিকূলসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশ। ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সফলতাও বাড়ছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) বেশ কয়েকটি জাত ছাড়াও এরই মধ্যে পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)’র বিজ্ঞানীরা মোট ১৩টি প্রতিকূল পরিবেশে সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে লবণসহিষ্ণু নয়টি, খরাসহিষ্ণু দুটি ও বন্যাসহিষ্ণু চারটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন তারা। ২০১৩ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এতগুলো প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের দিক থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম জেনেটিকেলি মোডিফাইড ফসল বিটি বেগুনের চারটি জাত অবমুক্ত করে। যার মধ্যে বেগুনের প্রধান শত্রু ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধী জীন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মাধ্যমে আলুর নাবি ধ্বসা রোগের প্রতিরোধী জীন প্রতিস্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।

কৃষি তথ্যবর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তির বিশ্ব। জীবন উন্নয়ন ও টেকসই বিশ্ব গড়তে তথ্য প্রযুক্তির সেবা অমিত। সে কারণে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ই-কৃষি খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার জানালা। কৃষি তথ্য সার্ভিস দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ৪৯৯টি ‘‘কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র বা Agriculture Information and Communication Centre (AICC)’’ স্থাপন করেছে। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি তথ্যকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনলাইনে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে মুঠোফোনের জোয়ারে ভাসছে এদেশ। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ছাড়িয়ে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুয়ায়ি ১০ শতাংশ মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়লে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ হারে বাড়ে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের ১৬১২৩ নম্বরে যেকোন মোবাইল থেকে ফোন করে নামমাত্র খরচে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট অফ লাইন/অন লাইনে সার সুপারিশ নির্দেশিকা প্রদান করছে। আখ চাষিরা মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ই-পুর্জি সেবা গ্রহণ করছেন। এমনকি ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেশ-বিদেশের কৃষি তথ্য সেবা পাওয়া যাচ্ছে।

এক সময় বলা হতো ‘দুধে ভাতে বাঙালি’ কিংবা বলা হতো ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। বর্তমান সরকার তার সুপ্রসারিত কৃষি নীতিতে শুধু দুধে ভাতে বা মাছে ভাতে সীমিত নয় পুষ্টিতে বাঙালি হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হতে চায়। সরকার ঘোষিত রূপকল্প দু’হাজার একুশ অনুযায়ি ২০১৩ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও বর্তমান জনবান্ধব সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সবশেষে বলতেই হয়, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যতো অর্জন আছে, তার মধ্যে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো। এটা বিশ্বের যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণও বটে।