ব্রাহমা মুরগি প্রাচীন এশিয়াটিক মুরগির একটি বংশধর। এটি বড় জাতের মুরগীর মধ্যে অন্যতম। যদিও ব্রাহমা মুরগির মূল উৎস নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে বিভিন্ন বৈশিষ্ট থেকে ধারনা করা হয়, আমদের দেশের চিটাগং (চট্টগ্রামের) অঞ্চলের মুরগি ও আমেরিকার আঞ্চলিক কিছু বড় জাতের মুরগির সংকরায়নে ব্রাহমা মুরগি তৈরী হয়েছে। ১৮৫০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এটি আমেরিকার প্রধান মাংস উৎপাদনকারী জাত হিসেবে বিবেচিত ছিলো।
জর্জ বার্নাহাম নামে এক ঔপনিবেশিক ১৮৫২ সালে উপমহাদেশ থেকে প্রথম এই জাতটিকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। তিনি সাদা-কালো ছোপ ওয়ালা ৯ টা ব্রাহমা মুরগি কুইন ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেন। মূলত তখন থেকেই এটার ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
এরপর ইংলিশ বিভিন্ন জাতের সাথে ক্রসের মাধ্যমে ‘কালো ব্রাহমা’ নামে এক নতুন জাত তৈরি হয়। তারপর এদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। এরাই মূলত আমেরিকার মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত হিসেবে বিবেচিত ছিলো। পরবর্তিতে এদের থেকে বেশ কিছু উন্নত জাতের মুরগির স্ট্রেইন ডেভেলপ করা হয়। যেমন, সাংহাই জাত।
আমেরিকান প্রোল্ট্রি এসোসিয়েশন অফ পার্ফেকশন এর প্রথম সংস্করণে হালকা এবং পরে গাঢ় রঙের ব্রাহমা মুরগি যুক্ত হয়। এটি মূলত ভারতীয় উপমহাদেশ (চট্টগ্রাম অঞ্চল) হতে ব্রিটিশরা প্রথম ইংল্যান্ডে নিয়ে যায়। তাই এর নাম ব্রাহামা দেয়া হয়। ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদের নাম হতে ব্রাহমা নামটি নেয়া হয়েছে ।
ব্রাহমা জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য
ব্রাহমা মুরগি আসলে কয়েকটি উদ্দেশ্যে পালন করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে এদেরকে সৌখিন ভাবে পালন করতেই বেশি দেখা যায়।
এরা দেখতে খুব সুন্দর, আকর্ষনীয় ও বড় আকারের পাখি। যখন এরা দাঁড়িয়ে থাকে তখন এদের বেশ বড় ও দীর্ঘ মাথা দেখা যায়। এদের দেহ ঠিক যেন ইংলিশ V অক্ষরের মতো।
ব্রাহমা মুরগির বেশ শক্তিশালী পা এবং পায়ে পশম রয়েছে। এদের গায়ের পশম বা পালক খুব শক্তভাবে যুক্ত থাকে না। মাথায় মটরশুঁটির মতো ছোট আকারের ঝুটি রয়েছে।
সাধারনত এরা সব ধরনের জলবায়ুর সাথেই নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে। তবে এরা শীত সহনশীল জাত।
এদের ডিমের রং বাদামি এবং ডিমের ওজন প্রায় 55 থেকে 60 গ্রাম হয়। মুরগির তুলনায় এদের মোরগের আকার বেশ বড়। পূর্নবয়স্ক মোরগ প্রায় সাড়ে পাঁচ কেজি এবং মুরগি সাড়ে চার কেজি মত হয়ে থাকে।
আচরণ ও মেজাজ
ব্রাহমা জাতের মুরগি বেশ বড়, সুশৃংখল এবং হালকা ডাকাডাকি করা একটি পাখি। এরা বেশ লম্বা সময় ধরে ডিম দেয় এবং এদের ডিমের সাইজ বেশ বড়। যদিও অন্যান্য জাতের মুরগি তুলনায় এরা কম ডিম দেয়। এরা বেশ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দেখতে খুব সুন্দর হয়।
ব্রাহমা মুরগির পালক দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। সাধারণত এরা শুকনো অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে। কারণ, এদের পায়ে পালক থাকায় তা কাদা লেগে আটকে যেতে পারে। এতে এদের পায়ের আঙ্গুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ব্রাহামা মুরগি মোটেও উড়তে পারে না। ফলে এদেরকে মাত্র দু-তিন ফুট বেড়ার ভিতরেও স্বাভাবিক ভাবে পালন করা যায়। তবে এদেরকে পালন করতে হলে বেশ জায়গা দিতে হয়। ব্রাহমা মুরগির বেশ বড় মাংসপেশি রয়েছে।
ব্রাহমা জাতের মুরগি অন্যান্য মুরগির তুলনায় বেশ ধীর স্থির। এরা মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে এবং সহজে রাগান্বিত হয় না। সাধারণভাবে এরা অন্যান্য পশু পাখিদের সাথে আনন্দে ঘুরে বেড়ায়।
সাধারনত ব্রাহামা 6-7 মাসের ভিতরে ডিম দেয়া শুরু করে এবং সারা শীতকাল জুড়েই ডিম দেয়। শীতকালে এদের গায়ের পশম খুব সুন্দর হয়ে ওঠে এবং তিব্র ঠান্ডা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে। এরা অন্যান্য জাতের মুরগির উপর সহনশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। খুব বেশি আক্রমনাত্মক স্বভাব এদের নেই। সুতরাং যে কোন প্রজাতির সাথেই এদের রাখা যায়।
ব্রাহমা মুরগী (Brahma Chicken) | জাতের তথ্য বা প্রোফাইল
জাতের নাম : ব্রাহমা (Brahma)
অন্য নাম : ব্রহ্মপুত্র, চিটাগং গ্রে, সাংহাই।
পালনের উদ্দ্যেশ্য : মাংস , সৌন্দয্য বর্ধন বা প্রদর্শনী, অন্য জাতের স্ট্রেইন, দ্বৈত-উদ্দেশ্য।
জাতের আচরণ : শান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ, সহজবশ্য, নিরীহ।
আকার : বেশ বড়। সাধারণত ৪.৫ থেকে ৫.৫ কেজি।
তা দেয়ার প্রবনতা : এভারেজ।
ঝুঁটি : মাঝারী, একক ছোট ঝুঁটি।
জলবায়ু সহনশীলতা : সব জলবায়ু ।
ডিম রঙ : হালকা বাদামী।
ডিমের আকার : বড়
ডিম উৎপাদনশীলতা : সাধারন মানের (৫৫-৬০ ডিম/বছর)
বৈচিত্র্য : পীত, নীল, কলম্বিয়ান নীল, কালো, হালকা ধূসর, গোল্ড এবং সাদা।
মূল দেশ : ভারতীয় উপমহাদেশ।
এক নজরে ব্রাহমা মুরগি তথ্য
ভাল দিকঃ
দেখতে খুব সুন্দর ।
বেশ বড় হয়।
অনেক মাংস হয়।
শান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ, সহজবশ্য।
শান্ত স্বভাবের , আক্রমনাত্মক নয়।
অন্যান্য মুরগির জন্যও ভালো আচরণ করে।
আটকে পালা উপযোগী।
বড় আকারের ডিম পাড়া।
উড়াউড়ি করেনা।
খারাপ দিকঃ
ভাল ডিম দেয়না।
বেশি খাদ্য লাগে।
দেরীতে ম্যাচুরিটি আসে।
ব্রাহমা মুরগি কি আপনার জন্য ভালো?
ব্রাহমা মুরগির জন্য আপনার জন্য ভাল, যদি আপনি……
আপনি কিছু সুন্দর পালকের, প্রদর্শনীযোগ্য মুরগি পালতে চান।
বেশি মাংস দেয়, এমন জাতের মুরগি পালতে চান।
একটি ভাল জাতের দ্বৈত-উদ্দেশ্য (dual purpose) মুরগী পালতে চান।
যদি আপনি বড় জাতের সৌখিন মুরগি পালতে চান।
আপনি শান্তশিষ্ট এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে এমন জাতের কিছু মুরগি পালতে চান।
আপনার বাড়ির আঙিনায় পোষা যায় এমন কিছু মুরগি পালতে চান।
আপনি যদি বড় বাদামি ডিম উৎপাদন করে এমন কিছু মুরগি পালতে চান।
শান্ত স্বভাবের ভালো আচরণের কিছু মুরগি যদি আপনি খুঁজে থাকেন।
যে কোন জলবায়ুতে সহিষ্ণু এমন কিছু জাতের মুরগি পালতে চান।
আপনি যদি সহজে পালন করা যায় এমন জাতের কিছু মুরগি পালতে চান।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২