শীতকালে মুরগির বাড়তি যত্ন নিবেন যেভাবে

269

শীতকালে মুরগি পালনে সাবধান না হলে পোল্ট্রি খামারিরা লোকসান করতে পারেন। নিচে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

মুরগির থাকার স্থানঃ শীতের সময়ে মুরগির ঘর কিংবা খামারের ভেতরের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। মুরগির থাকার স্থানের আশপাশের ঝোপ–জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করতে হবে। মুরগির থাকার স্থানে যাতে দিনের আলো পরিপূর্ণভাবে ঘরের চালার ওপর পড়ে। ঘরের দরজা ও জানালার ফাঁকা বন্ধ করে দিতে হবে যাতে ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।

মুরগির খাবারঃ শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় মুরগি খাবার, বেশি খায়। অতিরিক্ত খাবার খেয়ে শরীরে তাপ উৎপাদন করে। অর্থাৎ শীতকালে শরীরে বেশি ক্যালরি দরকার হয়। এ জন্য রেশনে শর্করা–চর্বি উৎপাদনের উৎস কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে রেশনের সব খাদ্য উপাদানের পরিমাণগুলো ঠিক রেখে কিছু পরিমাণ তেল মিশিয়ে ক্যালরির পরিমাণ বাড়ানো যায়।

ভেন্টিলেশনঃ মুরগির ঘরে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে ঘরে উৎপন্ন বিষাক্ত বাতাস বের করে দেয় এবং বিশুদ্ধ বাতাস প্রবেশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শীতকালে ঘরে ঠাণ্ডা বাতাস যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সব দরজা-জানালা বন্ধ রাখলেও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা অবশ্যই চালু রাথতে হবে।

লিটারঃ শীতকালে লিটার হিসেবে ধানের শুকনা তুষ সবচেয়ে ভালো। তুষ মুরগিকে গরম রাখে।মুরগি যদি ফ্লোরে পালন করা হয়, তাহলে বড় মুরগির জন্য লিটারের পুরুত্ব চার ইঞ্চির কম হবে না। লিটারসামগ্রী হতে হবে পরিচ্ছন্ন ও দূষণ মুক্ত। কোনো কারণে পানি পড়ে লিটার ভিজে গেলে ভিজা লিটার ফেলে ওই স্থানে শুকনা লিটার বিছতে হবে। লিটার যেন খুব শুকনা ধুলাময় না হয়।

তাপমাত্রাঃ শীতকালে মুরগি পালনে সবচেয়ে বড় সমস্যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশেষ করে এই শীতে। মুরগির ঘরে স্বাভাবিক তামমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। মুরগির ঘরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা দরকার ৬৫-৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যখন পরিবেশের তাপমাত্রা খুব বেশি কমে যায়, তখন হিটিং বাল্ব সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে। ঘরের চালা টিনের হলে হার্ডবোর্ড জাতীয় পদার্থ দিয়ে সিলিং দিতে হবে। ঘর উষ্ণ রাখতে টিনের বা ছাদের ওপর খড় বিছিয়ে দিতে হবে। ঘরে বাতাস চলাচালের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

পানিঃ মুরগি যা খাবার গ্রহণ করে তার দ্বিগুণ পানি পান করে। তবে শীতকালে ঠাণ্ডার কারণে পানি গ্রহণের পরিমাণ কম হয়। তাই পানি গ্রহণের পরিমান ঠিক রাখতে প্রচণ্ড শীতের সমকয় সকালে ঠাণ্ডা পানি না দিয়ে হালকা গরম দিতে হবে। পানি ভরার আগে পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

ভ্যাকসিনেশনঃ সঠিক খামার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। ডিম পাড়া দেশি মুরগির জন্য প্রতি ৪ মাস পড় পড় রানিক্ষেত ভ্যাকসিন দিতে হবে।আর ব্রিডার খামারের জন্য স্পুর্ণ ভ্যাকসিনেশন কর্মসুচি অনুসরণ করতে হবে। শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে বিশেষ করে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও রানিক্ষেত রোগ সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। ধারণা করা হয়, রানিক্ষেত রোগ প্রতিরোধ করার মাধ্যামে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ কমানো যায়। এ জন্য সময়মতো রানিক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন দিতে হবে।

জীবাণুনাশক স্প্রেঃ শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তাই বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা খামারের আশপাশে ১০০ গজের মধ্যে প্রতিদিন জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২