কোনভাবেই কুল খুঁজে পাচ্ছেন না দেশের প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিরা। দেশের প্রোটিনের একটি সহজলভ্য উৎস পোল্ট্রি পণ্য। যা দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই পোল্ট্রি পণ্যের উৎপাদনে যারা কাজ করে সেই পোল্ট্রি খামিরারাই পাচ্ছেন না তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফার্মের ডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদনে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে সেই খরচও উঠছেনা। ফলে প্রতিনিয়ত লোকসানে হতাশ হয়ে পড়ছেন খামারিরা।
বর্তমান পাইকারী ও খুচরা বাজারে পোল্ট্রি পণ্যের বিশেষ করে ডিম ও ব্রয়লারের মাংসের ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না খামারিরা। এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে সব মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় ১৪০-১৪৫ টাকা। কিন্তু বর্তমানে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে ১১৫-১২৫ টাকা দরে। এতে করে প্রায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে লোকসান হচ্ছে প্রায় ২৫-৩০ টাকা। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে দেশের প্রান্তিক খামারিদের।
এদিকে ক্রমাগত আমদানি করা ফিডের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ফিডের কাঁচামালের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ফিডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে চাপে পড়েছে দেশের প্রান্তিক খামারিরা। খামারিরা জানিয়েছেন যে হারে খাদ্যের দাম বেড়েছে সেই তুলনায় বাজারে ডিমের দাম পাওয়া যাচ্ছেনা ফলে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে করে খামার চালিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য বলেও তারা জানান।
নারায়ণগণজের ব্রয়লার খামারি তোহিদ বলেন, প্রতিটি ব্রয়লার বাচ্চা কিনতে হচ্ছে প্রায় ৫০ টাকা দরে। প্রতিটি বাচ্চার পিছে খাদ্য, ভ্যাকসিন, ঔষধ সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ নির্বাহ করতে হয়ে। এছাড়াও কিছু বাচ্চা বিভিন্ন কারণে মারা যায় এতে করে গড়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করলে লস হয়। গত শেডে লস করেছি। ভাবলাম সামনে হয়তো দাম বাড়বে তাই শেডে আবার বাচ্চা উঠাইছি। কিন্তু বর্তমান বাজারমূল্যে নিশ্চিত আবারও লস হবে। তাই ভাবছি এই অনিশ্চিত ব্যবসা গুটিয়ে অন্যকিছু করব।
নরসিংদির খামারি সোহেল কে বলেন, বর্তমানে ফার্মে মুরগি তুলতে ভয় পাচ্ছি। বর্তমান দামে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম বিক্রিতে খরচের টাকা উঠছে না। করোনাকালীন সময়ে অনেক লোকসান গুনেছি। এখনো যদি লোকসান করি তাহলে এই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা। এছাড়াও প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে গুনতে অনেক খামারি পোল্ট্রি ব্যবসা বাদ দিয়ে বিকল্প পথে রুজির ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২