এটিএম ফজলুল করিম, পাবনা প্রতিনিধি: ফসলের উৎপাদন খরচ কমতে এবং বোরো ধানের ফলন বাড়াতে পাবনায় এবার ব্যতিক্রমধর্মী নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আর তা বাস্তবায়নে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এরই অংশ হিসেবে সেচনির্ভর ও ব্যয়বহুল বোরো ধানের আবাদ কমিয়ে এখানে ডাল, তেল ও মসলা ফসলের আবাদ সম্প্রসারণে ব্যাপক কর্মসুচি হাতে নেয়া হয়েছে। এ লক্ষে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন আনতে উফশীসহ (উচ্চফলনশীল) হাইব্রিড জাত ব্যবহার, বিজ্ঞানসম্মত আবাদ, সেচযন্ত্রের ব্যবহার, সুষম মাত্রার সার প্রয়োগ, সঠিক বয়সের চারা রোপণ, গুটি ইউরিয়া ব্যবহার, এলসিসি (লিফকালার চার্ট) অনুসরণ, লোগো পদ্ধতি, জৈব সার ব্যবহার, অতন্ত্র জরীপের মাধ্যমে রোগবালাই-পোকামাকড় দমন, আলোক ফাঁদ ব্যবহার, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমিতির মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, আধুনিক চাষাবাদের প্রশিক্ষণসহ আরো নানা বিষয়ের ওপর কাজ চলমান আছে। এছাড়া সারিতে চারা রোপণ, পার্চিং এবং উঠোনবৈঠকের মাধ্যমে কৃষাণ-কিষাণীদের তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার’র (১৬১২৩) ব্যাপক প্রচারের কারণে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসম্পদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে চাষিদের মধ্যে জাগরণ তৈরি করেছে, যা কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এছাড়া মাঠ দিবস, প্রদর্শনী প্লট স্থাপন এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে কৃষকের সাথে কৃষি কর্মকর্তাদের সম্পর্ক হচ্ছে আরো নিবিড় । কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তেরের জেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন: গুটি ইউরিয়া সাধারণ ইউরিয়ার মতো তিনবার জমিতে দিতে হয় না, একবার দিলেই চলে। এতে খরচ কম হয়, ফলন বেশি। শতকরা ৩৫ ভাগ সার কম লাগে। বিঘা প্রতি প্রায় ১০৪ কেজি ধান বেশি পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে সারের অপচয় কম হয় । সারের কার্যকারিতা দীর্ঘদিন অটুট থাকে। গুটি ইউরিয়া মাটিতে থাকা উপকারি অনুজীবের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ভরা মৌসুমেও সার সংকটের কোনো দুর্চিন্তা করতে হয় না । সুত্র আরও জানায়, প্রতি বিঘার জন্য আউশ ও আমনে ১৫ কেজি এবং বোরো ধানের ক্ষেত্রে ২২ কেজি সার প্রয়োজন হয়। সার প্রয়োগের পর জমিতে প্রয়োজনীয় পানি রাখতে হবে যাতে জমির মাটি ফেটে না যায়। এবার জেলায় হাইব্রিড ধানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৩২২৪ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছে ২০৫০ হেক্টর। উফশী লক্ষমাত্রা ৫৪ হাজার ১শত হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ৫২ হাজার ৫শত হেক্টর। স্থানীয় জাতের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ শত ৩০ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছে ৮শত হেক্টর। এখন মাঠের বাড়ন্ত ধানের পরিচর্যাসহ অন্যান্য কাজে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।