আন্তর্জাতিক বাজারে পোল্ট্রি খাদ্যের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে ফিডের দাম। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনকারীরাও পড়েছে বিপাকে। যারফলে প্রতিষ্ঠানগুলো ফিডের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। এমতাবস্থায় বাজারে ফিডের সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ফিডের উচ্চ মূল্য নিয়ে হতাশ দেশের প্রান্তিক খামারিরা।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর তথ্যমতে, ২০২০ সালের মার্চে ভুট্টার কেজি ছিল ২৪.১৭ টাকা, এই মে মাসে তা হয়েছে ৩৫ টাকা। ৩৭.২৫ টাকার সয়াবিন মিলের দাম এখন ৭০ টাকা। ৩৮.৫০ টাকার ফুল ফ্যাট সয়াবিনের দাম হয়েছে ৭৬ টাকা। ২১.২৫ টাকার রাইস পলিস কিনতে হচ্ছে ৩৬.৩৩ টাকায়। ১৩৩.৩৩ টাকার এল-লাইসিন ২৫০ টাকা, ২০০ টাকার ডিএলএম ৩৩০ টাকা, ৫৪ টাকার পোলট্রি মিল ১১০ টাকা এবং ১০০ টাকার ফিশ মিল কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
ফিড তৈরিতে ৫০-৫৫ শতাংশ ভুট্টা এবং ৩০-৩৫ শতাংশ সয়ামিলের দরকার হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে সয়ামিলের দাম ৩০ শতাংশ এবং ভুট্টার দাম ১৮ শতাংশ বেড়েছে। গত আগস্টে সয়ামিলের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৪ টাকা, এই মার্চে হয়েছে ৭০ টাকা। বর্তমানে বাজারে সয়ামিল ৬৬ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। গত ১১ মার্চ ব্রয়লার মুরগির ফিডের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৭ টাকা, গত ১৭ মে তা হয়েছে ৬৩ টাকা।
লালমনিরহাটের দলগ্রামের পোল্ট্রি খামারি মাহতাব বলেন, ২০২১ সালেও যে ফিড কিনেছিলাম প্রতিকেজি ৪৮ টাকা সেই একই ফিড বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ৬৩ টাকা দরে। ফিডের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বাড়লেও মুরগির দাম বাড়েনি। আগের দামেই মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিটি শেডেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। ২০২১ সালে ৪০০০ মুরগি শেডে তুললেও বর্তমানে ৫০০ করে তুলছি। লোকসান হলেও ব্যবসা চালাচ্ছি এই আশায় যদি সামনে মুরগির দাম বাড়ে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা গুটানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।
পোল্ট্রি খাদ্যের দাম দফায় দফায় বাড়তে থাকায় ব্যবসায় টিকতে না পারা কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরীর পোল্ট্রি খামারি রজনী কান্ত বলেন, লাভের আশায় ঋণ নিয়ে পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। কিন্তু ফিডের দামের পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি শেডেই লোকসান করেছি। বর্তমানে খামার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
আরেক খামারি নাজিম জানান, গত বছরেও খামারে ২০ হাজার লেয়ার মুরগি ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমার খামারে ৫ হাজার লেয়ার রয়েছে। প্রতি বস্তা ফিড কিনতে হচ্ছে ৩২০০ টাকা দরে। এছাড়াও ভ্যাকসিন, বাচ্চা সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আমার মত প্রান্তিক খামারিরা দিন দিন ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিন akkbd.com কে বলেন, চলতি বছর দেশে ফিড তৈরির অন্যতম কাঁচামাল ভুট্টার ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে। এছাড়াও ভুট্টার দাম নাগালের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সে হারে ফিডের দাম বেশি বেড়েছে। বর্তমানে ফিডের মান ও প্রতিষ্ঠানভেদে কেজিপ্রতি ৬৩ টাকা ও এর অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ফিডের দাম মিনিমাম ৫ টাকা কমিয়ে আনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সরকারকেই কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্ম্যে প্রান্তিক খামারিরা টিকে থাকতে পারছেনা। পোল্ট্রি উৎপাদনের জন্য ফিড , ভ্যাকসিন, বাচ্চাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রতিটি জিনিসের উপর ভ্যাট যুক্ত হওয়ায় খামারিদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। যার কারণে বর্তমান বাজারমূল্যে মুরগি বিক্রি করে লাভ করা সম্ভবপর হচ্ছেনা। তাই দেশের পোল্ট্রি শিল্প তথা খামারিদের রক্ষার্থ সরকারকেই নজর দিতে হবে।সূত্র: আধুনিক কৃষি খামার।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৫মে ২০২২