ডিমের পিস ১৫ টাকা, মুরগির কেজি ৪৫০

273

রাজশাহীতে লাল লেয়ার মুরগির ডিম প্রতি পিস ৯ টাকায় বিক্রি হলেও হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকায়। আর দেশী মুরগির ডিমের হালি ৫৫ টাকা। খুচরায় দেশী মুরগির প্রতিপিস ডিম ১৫ ও লাল লেয়ার ডিম ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দেশী মুরগির কেজি দাঁড়িয়েছে ৪৫০ টাকায়।

বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। গত দু-মাসে আটার কেজিতে বেড়েছে ১৭ টাকা। গতকাল আবার কমেছে ২ টাকা। ২৭ টাকার আটা বাজারে দাম দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকায়। এছাড়া বেড়েছে গরীবের মাংস নামে পরিচিত ডালের দাম। সেইসাথে মাংসের পরিবর্তে পুষ্টির যোগানদাতা ডিমের দাম যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দিনমজুর মানুষের বড় অংশের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ডিম। শরীরে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্যের ঘাটতি মেটাতে মাছ ও মাংসের পরিবর্তে ডিম খাচ্ছিলেন, এখন সেই ডিমের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে। খামারিরা বলছেন- পোল্ট্রি খাদ্যের দাম, শ্রমিক খরচ, ভ্যাকসিন দামসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম।

আজ শুক্রবার (২৭ মে ২০২২) রাজশাহীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার ও লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গাতেই ডিমের দাম একই। রাজশাহীতে ডিম আসে মূলত নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ জেলা ও রাজশাহী থেকে।

এছাড়া রাজশাহীর বাজারে ডিম আসে পবা উপজেলার পারিলা এলাকা থেকে। খামার পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খামারিরা প্রতিপিস লাল ডিমের দাম পাচ্ছেন ৮ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থ্যাৎ প্রতি একশ লাল ডিমের দাম ৮৮০ টাকা। সাদা ডিমের দাম পাচ্ছেন ৮ টাকা ১০ পয়সা। খামার থেকে আড়তে আসতে প্রতিপিস ডিম পরিবহনে খরচ হয় ১০ পয়সা। ভোক্তা পর্যায়ে দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৯ টাকা। দোকানে খুচরা বিক্রি হয় ১০ টাকা।

পবা উপজেলার পারিলার পোল্ট্রি খামারি বাবু বলেন, “গত ৬ মাসের ১৮০০ টাকা বস্তার খাদ্যে এক হাজার বেড়ে এখন ২৮০০ টাকা। ডিমের দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। আমরা ডিম উৎপাদন করে হিসাব করে দেখছি প্রতিপিস ডিমে ৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ পড়ছে। আর সামান্য লাভে বিক্রি করতে হয় ডিলারের কাছে। কমপক্ষে ৪ হাতবদলের পর সাড়ে ৭ থেকে ৮ টাকার ডিম ভোক্তারা পাচ্ছে ১০ টাকায়। খাদ্যের দাম কমালে আবার ৮ টাকায় ডিম খাওয়াতে পারব।”

রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রউফ এসেছিলেন এক পাতা (৩০ ডিম রাখা প্লাস্টিকের পাত্র) ডিম কিনতে। ডিমের দাম শুনে কিনলেন ১৫ টি ডিম। রউফ বলেন, ডিমের দাম ৬-৭ টাকা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এখন মুরগির মাংস ১৫০ টাকা, গরুর মাংস ৬০০ টাকা, খাশির মাংসের কথা জিজ্ঞেস করলাম ৯০০ টাকা। তো ভাবলাম ৩০ টা ডিম কিনে নিই।

ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া এলাকার ডিম ব্যবসায়ী মিঠু হোসেন বলেন, ডিমের যা দাম আছে তাতে কমার সম্ভাবনা নাই। খামারি পর্যায়ে ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বর্তমান দাম থাকলে তারা ভালো থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তাদেরও ভাবা উচিত। করোনার পর সবকিছুর দাম বেড়েছে। সেই তুলনায় ডিমের পিস ১০ টাকা থাকা দরকার। আমরা মাত্র ২০ পয়সা লাভে ডিম বিক্রি করি।

পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমান বলেন, ডিম দেওয়া পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা কমে গেছে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে। ৭ টাকা পিস খামারিদের কাছে কিনে হাতবদলের কারণে ৯ টাকা থেকে ১০ টাকা পড়ছে ভোক্তাদের কাছে। এ দায় তো আর আমরা নিবনা। তাছাড়া, ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন ২৮’শ টাকা। সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। ডিমের দাম বাড়াও যৌক্তিক! কোম্পানিরা প্রান্তিক খামারিদের হাতে ভিক্ষার থালা ধরিয়ে দিয়ে নিজেরাই রাজত্ব করছে। একেকটি কোম্পানি তিন লাখ-চার লাখ মুরগি পালন করছে।

সাহেব বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ডিমের দাম বেড়েছে। কাঁচাবাজারের ঠিক নাই। মাল (ডিম) একটু টান পড়লে দাম বাড়ে আবার ক্রেতা কমে গেলে বা চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায়। প্রতিহালি (৪টি) লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। সাদা ডিম ৩৪ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৬ টাকা, দেশী মুরগির ডিম ৫৬ হালি দরে বিক্রি করছি।

ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, কিছুদিন আগে কলেরা, বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মুরগি মারা গেছে। ডিমের দাম এবার ৩৮ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেক ডিমপাড়া লেয়ার খামারি মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। আর হাতবদলের কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। খামার থেকে সংগ্রহ করেন একজন, সেখান থেকে ডিলারের কাছে আসতে দাম বাড়ে প্রতিপিসে ১ টাকা। আবার ডিলার নিজে নেন ৫০ থেকে ৬০ পয়সা। বাঁকি খুচরা যারা যা দামে বিক্রি করতে পারেন। মোটে ৮ টাকার ডিম হয় ৯ থেকে ১০ টাকা।

কথা হয় রাজশাহী ডিম আড়ৎ সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন সাথে। তিনি বলেন, ‘ ডিমের দাম নির্ধারণ হয় ঢাকা থেকে। আমাদের রেট জানিয়ে দেওয়া হয় সে অনুযায়ী এখানে বাজার জানিয়ে দিই। ঢাকায় দাম বাড়লে এখানে বাড়বে; ঢাকায় কমলে এখানে কমবে। আমাদের কিছু করার নাই।”

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডিমের ভোগ ৭ দশমিক ২ গ্রাম থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ গ্রাম বেড়েছে।

অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উৎপাদনের তথ্য বলছে, দেশে ২০১০ সালে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬০০ কোটি পিস, যা এখন ১ হাজার ৭৩৬ কোটিতে পৌঁছেছে। এক দশকে উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বেড়েছে। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। পৃথক হিসাবে, কেবল মুরগির ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি। তবে, হাঁসের ডিমের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭মে ২০২২