দফায় দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি খামারিদের নাজেহাল করে তুলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মোট চতুর্থবারের মতো বাড়লো পোল্ট্রি খাদ্যের দাম। বেড়েছে ব্রয়লার, সোনালী ও লেয়ার মুরগির ফিডের দাম। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের নিবন্ধিত ২৭০টি ফিড মিল তাদের উৎপাদিত খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে।
৩০ মে নারিশ, কাজী, প্যারাগনসহ বড় বড় অন্তত ১০টি ফিড মিলের সাথে কথা বলে জানা গেছে। প্রতিকেজি খাদ্যে মধ্য মে থেকে এখন পর্যন্ত দাম বেড়েছে ২ থেকে আড়াই টাকা। ফলে ৫০ কেজির বস্তা ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে খামারিদের।
পড়তে পারেন: ডিমের পিস ১৫ টাকা, মুরগির কেজি ৪৫০
খামারিরা বলছেন, করোনাকালের শুরু থেকে প্রতিবস্তা পোল্ট্রি খাদ্যে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা শুরুর দিকে ১৮’শ টাকার খাদ্যের বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৮’শ ৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বৃহৎ পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাজী ফিডের বিপনন বিভাগের প্রধান সালাউদ্দিন হাওলাদার জানান, বর্তমানে ব্রয়লার স্টার্টার ফিড ৩ হাজার ১৬০ টাকা, ব্রয়লার গ্রোয়ার ৩ হাজার ১৯৫ টাকা, ব্রয়লার পুলেট ৩ হাজার ১৫৫ এবং ব্রয়লার ফিনিশার ৩ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে লেয়ার স্টার্টার ২ হাজার ৮৯৫ টাকা, লেয়ার গ্রোয়ার ২ হাজার ৭৯৫ টাকা, প্রি লেয়ার ২ হাজার ৭৮৫ টাকা, লেয়ার লেয়ার ২ হাজার ৭২০ টাকা, লেয়ার লেয়ার ২ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৯৫ টাকা। এছাড়া, কাজী সোনালী স্টার্টার ফিড এবং গ্রোয়ার একই দামে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৫০ টাকায়।
কথা হয় নারিশ কোম্পানির সাথে। বৃহৎ এ ফেড মিল কোম্পানির উৎপাদনকৃত খাদ্যের তথ্য এগ্রিকেয়ার২৪.কমের হাতে আসে। দেখা যায়, বর্তমানে নারিশ ব্রয়লার প্রি স্টার্টার, ব্রয়লার স্টার্টার এবং ব্রয়লার গ্রোয়ার ফিড ৬৩ টাকা ৩৪ পয়সা কেজি হিসেবে ৩ হাজার ১৬৭ টাকায় ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি করছেন, ব্রয়লার ফিনিশার ৩ হাজার ১১৭ টাকা, ব্রয়লার সেলস সেন্টার ফিড পুলেট ২৫ কেজির বস্তা ১ হাজার ২৪১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে নারিশের লেয়ার স্টার্টার ২ হাজার ৯০৬ টাকা, লেয়ার গ্রোয়ার ২ হাজার ৮০৬ টাকা, প্রি লেয়ার ২ হাজার ৭৯৬ টাকা, লেয়ার লেয়ার ২ হাজার ৭৪১ টাকা, লেয়ার লেয়ার ২ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭.০৬ টাকা। এছাড়া সোনালী স্টার্টার ও সোনালী গ্রোয়ার ৫০ কেজির বস্তা ৫৯ টাকা ১০ পয়সা কেজি হিসেবে ২ হাজার ৯৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্যারাগন গ্রুপের মার্কেটিং বিভাগের কর্তকর্তা আফজাল হোসাইন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, বর্তমানে প্যারাগন ব্রয়লার স্টার্টার সুপার গোল্ড, ব্রয়লার স্টার্টার ২ এবং ব্রয়লার গ্রোয়ার সুপার গোল্ড প্রতিকেজি খাদ্য ৬৩ টাকা ৩০ পয়সা হিসেবে প্রতিবস্তা খাদ্য বিক্রি করছে ৩ হাজার ১৬৫ টাকায়। ব্রয়লার ফিনিশার সুপার গোল্ড ৩ হাজার ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্যারাগনের লেয়ার স্টার্টার গোল্ড ২ হাজার ৯১২ টাকা, লেয়ার গ্রোয়ার গোল্ড ২ হাজার ৮১২ টাকা, লেয়ার গ্রোয়ার গোল্ড ২ হাজার ৮৩৭ টাকা, লেয়ার গ্রোয়ার গোল্ড পুলেট ২ হাজার ৮১২ টাকা, লেয়ার প্রি লেয়ার গোল্ড ২ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭৮৭ টাকা। লেয়ার লেয়ার গোল্ড ম্যাশ ২ হাজার ৭২২ টাকা, লেয়ার লেয়ার গোল্ড পুলেট ২ হাজার ৭৭২ টাকা এছাড়া লেয়ার লেয়ার ২ গোল্ড ম্যাশ ২ হাজার ৬৯৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে প্যারাগনের সোনালী ব্রয়লার স্টার্টার ও সোনালী ব্রয়লার গ্রোয়ার ২ এবং সোনালী ব্রয়লার গ্রোয়ার ৫০ কেজির বস্তা ৫৮ টাকা ৬০ পয়সা কেজি হিসেবে ২ হাজার ৯৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী ব্রয়লার ফিনিশার ২ হাজার ৮৯৫ এবং মার্কেট ফিড ২৫ কেজির বস্তা ১ হাজার ১১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আফতাব পোল্ট্রি ফিড কোম্পানির সাকিব হাসান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, আফতাব ব্রয়লার স্টার্টার ৫৭ থেকে ৫৩ টাকা কেজি, লেয়ার ৫৩ থেকে ৫৭ টাকা এবং সোনালী ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পোল্ট্রি খাতে পরিচিত সিপি কোম্পানির সাইফুল হাসনাত এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, সিপি ব্রয়লার স্টার্টার ৩ হাজার ১৬৫ টাকা ও ব্রয়লার ফিনিশার ৩ হাজার ১৫৫ টাকা। সিপি লেয়ার ফিড ২ হাজার ৭৩০ টাকা এবং সোনালী ফিড ২ হাজার ৯৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাহার ফিড কোম্পানির কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, নাহার ব্রয়লার স্টার্টার ৩ হাজার ১৬৭ টাকা। নাহার লেয়ার লেয়ার ফিড ২ হাজার ৭৪০ টাকা এবং সোনালী ফিড ২ হাজার ৯৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কোয়ালিটি ফিড কোম্পানির সূত্র জানায়, কোয়ালিটি ব্রয়লার স্টার্টার ৩ হাজার ১৭৫ টাকা। কোয়ালিটি লেয়ার প্রিমিয়ার ফিড ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং কোয়ালিটি লেয়ার স্টার্টার ফিড ও সোনালী ফিড ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রতিকেজি ফিড বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোহসিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পোল্ট্রি খামারিদের দেখার কেউ নাই। সরকারের উচিত পোল্ট্রি সেক্টরকে তদারকি করা। এদিকে নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। যদি এখন এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে পোল্ট্রি খামারিরা নিঃস হয়ে পড়বে। লোকসানে জীবনের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে যাবে। কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যাবে কোটি জনগণ। তখন তাদের বেঁধে দেওয়া দামেই ডিম-মুরগি কিনতে হবে।
তিনি আরোও বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে সচেতন হয়ে পোল্ট্রি ব্যবসায় আসা প্রয়োজন। অনেক সময় মুরগি মারা যাওয়ার ফলে লোকসান গুণতে হয় খামারিদের। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরকে আরো এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া পোল্ট্রি খাদ্য তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন, ভুট্টাসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। সেক্ষেত্রে প্রডাকশন কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। খাদ্যের মানও আগের মতো নেই। ডিম কম পাওয়া যাচ্ছে। ইউরোপ ও চীন থেকে মূলত এসব পণ্য আমদানি করতে হয়। সেখানেই দাম বেড়েছে তাই খাদ্যের দামও বেড়েছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/৩০মে ২০২২