‘ডিম আগে না মুরগি আগে?’ এমন প্রশ্ন অনেক সময় শোনা যায়। কিন্তু এমন বিতর্কিত প্রশ্নের সঠিক উত্তর মেলা ভার। কেননা পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তির শেষ নেই। এরই মধ্যে নতুন আরেকটি প্রশ্ন সাড়া ফেলেছে- মুরগি কীভাবে গৃহপালিত প্রাণী হলো?
বিজ্ঞানীরাও খুঁজতে চেষ্টা করছেন এই প্রশ্নের উত্তর। তারা গহীন জঙ্গলে পাখির অতীত পর্যালোচনা করে বলছেন, এক কালে মানুষ জঙ্গলের পাখিদের বিস্ময়কর ও অদ্ভুত মনে করতো। অনেক সময় দেবতাদের উৎসর্গ করতে এবং মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো এসব পাখি। এই তালিকায় মুরগিও ছিল। ধারণা করা হয় ৮ হাজার বা তারও বেশি বছর আগে চীন বা ভারত বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে মুরগি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’ এবং ‘অ্যান্টিকুইটি’ জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে ৩৫০০ বছর আগে থাইল্যান্ডে প্রথম মুরগির উদ্ভব।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় মুরগি কীভাবে গৃহপালিত প্রাণী হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গবেষকদের ভাষ্য: শুষ্ক জমিতে ধান ও অন্যান্য চাষের ফলে খাদ্য সংগ্রহে বন্যপাখিরা সেখানে আসতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে মানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ সৃষ্টি হয়। এভাবেই বন্যপ্রাণী মুরগী থেকে গৃহপালিত মুরগির প্রথম আবির্ভাব।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহপালিত ও প্রাচীন ডিএনএ বিশেষজ্ঞ এবং এ বিষয়ক প্রতিবেদনের লেখক গ্রেগার লারসন বলেছেন, প্রতিবেদনগুলো মুরগির ব্যাপক পুনঃমূল্যায়ন এবং মুরগি পালনের সময় এবং স্থান সম্পর্কে আমাদের ধারণা কতটা ভুল ছিল তা প্রদর্শন করে। প্রসিডিংস-এর প্রতিবেদনে, গবেষকরা ৮৯টি দেশের ৬০০টিরও বেশি স্থান থেকে পাওয়া প্রমাণ পুনঃমূল্যায়ন করেছেন এবং মধ্য থাইল্যান্ডের বান নন ওয়াট নামক স্থানে গৃহপালিত মুরগির প্রাচীনতম জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন। জীবাশ্মগুলো প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরনো।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামুদ্রিক ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই আফ্রিকার পশ্চিমে মুরগি ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত উত্তর ইউরোপে পৌঁছায়। পূর্ববর্তী ধারণা ছিল ৭ হাজার বছর আগে ইউরোপে মুরগি পৌঁছেছে। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। পরবর্তীতে ধারণা করা হয় মুরগি প্রথম ২৮০০ বছর আগে দক্ষিণ ইউরোপে পৌঁছায় এবং উত্তরাঞ্চলে পৌঁছাতে আরও কয়েকশ বছর সময় লেগেছে।
প্রসিডিংস-এর একজন লেখক ও মিউনিখের লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটির জোরিস পিটার্স বলেছেন, গবেষণাটি মুরগি পালনের উৎস এবং ইতিহাস নবরূপে রচনা করেছে। প্রতিবেদনের অপর লেখক জুলিয়া বেস্ট বলেছেন, ভূতাত্ত্বিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক পদ্ধতির পরিবর্তে রেডিওকার্বন ডেটিং-এর মাধ্যমে আমাদের কাছে এখন মুরগির সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক মিথস্ক্রিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে।
এসব প্রতিবেদনে প্রাচীনকালের মানুষ মুরগির সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতো তারও নিদর্শন রয়েছে। ব্রিটেন ও ইউরোপে গবেষকরা দেখতে পান প্রাপ্তবয়স্ক মুরগিদের কবর দেওয়া হয়েছে এবং তাদের নির্যাতনের কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি। এমনকি একটি ভাঙা পায়ের নিরাময় করা জীবাশ্মও পাওয়া গেছে। এ থেকে বোঝা যায় মানুষ মুরগির যত্ন নিতো। তবে মানুষ তখনও মুরগি খাওয়া শুরু করেনি, কিন্তু মুরগির অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে খুব দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ এই প্রাণীর সঙ্গে ভালো আচরণ করতে থাকে।
ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের নাওমি সাইকস বলেছেন, শত শতাব্দী ধরে মুরগি পালন হলেও আমরা অনেক পরে এসে তাদের নিয়মিত খাওয়া শুরু করেছি।তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪জুন ২০২২