বাংলাদেশে শীতের শরুতে এবং শেষে পোল্ট্রি খামারীরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিগত বছর গুলোতে দেখা গেছে বিশেষ করে টার্কি খামারীরা এই সময়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কেন এমন হয় ?
এই দুই সময়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য ঘটে। দেখা যায় দিনে আবহাওয়া গরম থাকে আবার রাতে হঠাৎ ঠান্ডা পরে যায়। অবস্থাটা এরকম ফ্যান চালিয়ে ঘুমালে ঠান্ডা লাগে, আবার ফ্যান বন্ধ করলে গরম গরম লাগে। শেষ রাতের দিকে ঠান্ডায় কাঁথা মুরি দিয়ে ঘুমাতে হয়। প্রকৃতির এই পালা বদলের সময়টা পশু পাখি হতে শুরু করে সকল প্রাণীর জন্যই অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। খুব সহজেই ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, করাইজার মত রোগ বাসা বাঁধে।
এছাড়া শীতের শুরুতে বিভিন্ন শীত প্রধান দেশ হতে পরিযায়ী পাখিরা অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশ হওয়ায় আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। অনেক সময় তারা নিজেদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী ও ফ্লু এর জীবানু নিয়ে আসে।
এইসব বিভিন্ন কারনে শীতের শুরু এবং শেষের দিকে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ফার্মে রোগ ব্যাধির সংক্রমণ বেশী দেখা দেয়। বিগত বছর গুলোতে চোঁখের সামনে অসংখ্য টার্কি ও পোল্ট্রি খামার শূণ্য হয়ে যেতে দেখেছি শীতের শুরু এবং শেষে।
বছর ঘুরে আবার আসছে শীত। এখনই সময় সচেতন হওয়ার।
শীত পূর্ব বিশেষ সতর্কতাঃ
বায়োসিকিউরিটি জোড়দার করা
এই দুই সময়ে লালন পালনের উদ্দেশ্যে হাট-বাজার হতে সবরকম প্রাণী ক্রয় হতে বিরত থাকুন।
শেডের চারপাশের অগাছা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে শেডের ভিতর ও বাহিরে ৩:১ অনুপাতে চুন এবং ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করুন।
অন্তত একদিন পরপর শেডের ভিতর এবং বাহিরে জীবানুনাশক স্প্রে করুন।
মেঝের লিটার সবসময় শুকনো ও ঝরঝরে রাখার চেষ্টা করুন।
প্রতি ১-২ সপ্তাহ পরপর প্রতি ১০বর্গফুট জায়গার জন্য ২৫০গ্রাম শুকনো গুড়া চুন এবং ০৫গ্রাম কপার সালফেট (তুতে) গুড়া মুরগি একপাশে সরিয়ে মেঝের লিটার উলট পালট করে ভালোকরে মিশিয়ে দিন।
যাদের প্যারেন্টস আছে তারা শীতের শুরুতেই রানিক্ষেত, ফাউলে কলেরা এবং সম্ভব হলে বার্ড ফ্লু ভ্যাকসিন দিয়ে দিন।
খামার এলাকায় কোন ধরনের প্রাণী এবং পাখি যেন প্রবেশ না করতে পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিন।
খামারে ভিজিটর নট এলাউড করুন।
নিজে বায়োসিকিউরিটি বা জৈব নিরাপত্তা মেনে চলুন এবং খামার কর্মীদের এবিষয়ে প্রশিক্ষণ দিন।
ঠান্ডা লাগবে এই ভয়ে পর্দা দিয়ে পুরো শেড ইন্ট্যাক্ট করে ফেলবেননা। অবশ্যই সঠিক পর্দা ব্যবস্থাপনা মেনে পর্দা দিবেন।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া হুটহাট কোন ধরনের ঔষধ এবং এন্টিবায়োটিক ব্যবহার হতে বিরত থাকুন।
সপ্তাহে দুইদিন ১লিটার পানিতে ১-২চা চামচ পরিমাণ হলুদের গুড়া ভালোকরে মিশিয়ে পাখিকে খেতে দিতে পারেন।
সপ্তাহে দুইদিন ১লিটার পানিতে ১-২চা চামচ রসুন পেস্ট করে মিশিয়ে ১বেলা মুরগিকে খেতে দিতে পারেন।
বিশুদ্ধ মধু সপ্তাহে দুইদিন ১লিটার পানিতে ১-২চা চামচ করে মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন।
বেশী শীতের সময় সকালে ও রাতে অবশ্যেই কুসুম গরম পানি খেতে দিবেন।
এছাড়া মাঝে মাঝে কুসুম গরম পানিতে তুলসি পাতা+১-২চা চামচ আদার রস + মধু সাথে একটু লেবুর রস মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৭অক্টোবর ২০২২