খাবার পানিতে টিকা দিতে হলে আপনাকে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। টিকা দেওয়ার আগের দিন দের থেকে দুই ঘন্টায় কতটুকু পানি খায় খাবার দেওয়ার ৪৫ মিনিট পর হিসাব করে বের করতে হবে।
দুই ঘন্টায় যা খায় তার ৫% পানি বেশি দেওয়া যেতে পারে, দের ঘন্টা কম হলে সব মুরগি খেতে পারে না, আবার দুই ঘন্টার বেশি হলে টিকা মারা যেতে পারে।
একটু সতর্ক থেকে পানিতে টিকা দিতে হবে। টিকা দেওয়ার ১ ঘন্টা আগে পানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
পানিতে টিকা মিশানোর নিয়ম
যেহেতু রোগ প্রতিরোধের জন্য মুরগিকি টিকা দেওয়া হয়। তাই আপনাকে যত্নসহকারে এই কাজটি করতে হবে। পানিতে টিকা মিশানোর ক্ষেত্রে প্রথমে হাত সাবান দিয়ে গ্লোভস পরে নিন।
এরপর পানির সাথে পাউডার অর্থাৎ ভ্যাকসিব্রুস্ট কিংবা ভেক সেফ বা এগ্রোমিল্ক বা স্কিম মিল্ক ২.৫ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মেশাতে হবে। ৫-১০ লিটার স্টক সল্যুশন তৈরি করতে হবে এবং ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে।
যাতে ক্রোরিন বা ভারি ধাতু অর্থাৎ হ্যাভি মেটাল নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। স্কিম মিল্ক মিশ্রিত ১-২ লিটার পরিমান স্টক সল্যুশনে ভ্যাকসিন ভায়ালের ক্যাপটা খুলে নিয়ে এই মিশানো পানিতে ভ্যাকসিন ভায়ালটি ডুবিয়ে এর মুখের রাবার খুলতে হবে।
লক্ষ রাখবেন যেন, টিকাটি ভালভাবে গলে যায। রাবারের কাটি দিয়ে আস্তে আস্তে মিক্স করুন এবং অবশিষ্ট পানি যোগ করে নিন। যতটুকু পানি প্রয়োজন তা একবারেই নিতে হবে পরে পানি যোগ করা যাবে না।
খামারের সব পাখি যাতে পানিটা সমানভাবে খেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এই পানিতে (ভ্যাকসিন মিশানো পানি) যেন সূর্যের আলো না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আই বি ডি টিকা মুখে আর রানিক্ষেত ও ব্রাংকাইটিস টিকা মুরগির চোখে দিলে ভালো কাজ করে।
মুরগিকে টিকা দেওয়ার সতর্কতা
মুরগিকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। যেমন- ঠান্ডা সময়ে অর্থাৎ সকালে কিংবা বিকারে যখন আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে তখন টিকা দিতে হবে।
ডিম পাড়া মুরগি হলে কিল্ড (মৃত) টিকা বিকালে, আর লাইভ টিকা সকালে পানিতে দেওয়া যেতে পারে। যে ডাইলোয়েন্ট (যেমন: পানি) দেওয়া হয় সেটিও ফ্রিজে নরমারে রাখতে হবে।
গরমের সময় আপনার হাত গরম থাকতে পারে তােই টিকার বোতল বা হাত ভেজা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, ১-২ ঘন্টার মধ্যে টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে।
যেখানে টিকা দিবেন সেই জায়গায় পেপার বিছিয়ে নিতে পারেন। কেননা টিকা নিচে পড়লে যাতে বুঝা যায় এবং পরে তা পরিস্কার করা সহজ হয়ে যাবে।
টিকা দেওয়ার সময় তাড়াহুরা করা উচিৎ নয়। আস্তে আস্তে টিকা দেওয়া উচিৎ এবং কিছু সময় হাতে ধরে রেখে তারপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
মুরগির কিল্ড বা মৃত টিকা দেওয়ার নিয়ম
প্রথমে টিকা ফ্রিজ থেকে বের করে নরমাল বা হালকা গরম পানিতে রেখে দিন যাতে টিকার তাপমাত্রা ১৮-২০ ড্রিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
ভ্যাকসিন গান গরম পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিন। তবে স্যাভলন কিংবা এ জাতীয় কোন জীবাণুনাশক ব্যবহার করবেন না।
ডিমপাড়া মুরগিকে বিকালে টিকা দিতে হবে কেননা সকালে ডিম পাড়ে। টিকা যদি বাহিরের লোক দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কাপড় পরিবর্তন করা উচিৎ।
কিল্ড বা মৃত টিকা মুরগির বুকের বা পায়ের মাংসে কিংবা গলায় চামড়ার নিচে দেওয়া হয় যা শোষিত হতে ৩০-৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
টিকা দেওয়া শেষ হলে স্থানটি ভাল করে পরিস্কার করুন এবং টিকার ভায়ালটি মাটিতে পুঁতে রাখুন।
মুরগির টিকা: ফাউল পক্স এর ব্যবহার
মুরগির পক্স (বসন্ত) রোগ প্রতিরোধ করতে এই টিকা ব্যবহার করা হয়। যে এলাকা গুলোতে পক্স কম হয় সে এলাকার খামার গুলোতে এই টিকা ১টি দিলেই চলে।
যে সব এলাকাগুলোতে ঝুকি অনেক বেশি অর্থাৎ রক্ত চোষক পোকামাকড় যেখানে বেশি দেখা যায় সেখানে ২ টি টিকা দেওয়া প্রয়োজন।
ডিম আসার কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ আগে এই টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে। সাধারণত মুরগির ৬ সপ্তাহ বয়সের আগে বেশি দুর্বল করা টিকা এবং ৬ সপ্তাহ পরে কম দুর্বল করা টিকা দিতে হয়।
টিকা দেওয়ার ৭-১০ দিন পর মুরগিকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে টিকা দেওয়ার জায়গা ফুলে গেছে অর্থাৎ টিকা কাজ করছে বুঝা যায়।
পক্স টিকার কর্মসূচি
প্রথম টিকা ৬ সপ্তাহ, প্রকৃতপক্ষে এই টিকা ৪ সপ্তাহে দেওয়া উচিৎ কেননা ৪ সপ্তাহ বয়সে মুরগির পক্স হতে পারে।
দ্বিতীয় টিকা দিতে হবে ১১-১২ সপ্তাহ বয়সে
পক্স রোগে মুরগি আক্রান্ত হলেও টিকা দেওয়া যায়, তবে বেশি আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন আর টিকা দিলে লাভ হবে না।
মেরেক্স টিকার ব্যবহার
এই টিকা সাধারণত মুরগির চামড়ার নিচে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন- এম ডি সি এফ এল ( ইলানকো), এইচ ভি টি (১২৬ এফ সি স্টেইন), সেরুটাইপ ৩ মুরগির চামড়ার নিচে প্রয়োগ করা হয়।
হ্যাচারীতে ০.২ এমএর ডোজ, অনেকে আবার ১৪ দিনের আগেই দ্বিতীয় টিকা দিয়ে দেয়। ১০০০ ডোজের জন্য ২০০ এমএর FDAH diluent মিশাতে হবে।
মুরগির ব্রাংকাইটিস টিকা ব্যবহার নিয়ম ও প্রয়োগ পদ্ধতি
১ম টিকা দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে কম প্রতিক্রিয়া হয়।যেমন এইচ ১২০, ম্যাসাচুসেটস বা কানেক্টিকাট দিয়ে টিকা দেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে এইছ ১২০ এবং এম ৪১ স্ট্রেইন বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
প্রথম ও দ্বিতীয় টিকার মাঝে বিরতি দিতে হবে ২-৩ সপ্তাহ। আর বুস্টার টিকার মাঝ বিরতি দিতে হবে ৪-৬ সপ্তাহ। রানিক্ষেত ও ব্রংকাইটিস টিকা এক সাথে দেওয়া যাবে না।
তবে কম্বাইন্ড হলে দেওয়া যাবে। সর্বশেষ লাইভ এবং কিল্ড টিকার মাঝে বিরতি দিতে হবে ৪-৬ সপ্তাহ। ডিম পাড়ার কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ আগে কিল্ড বা মৃত টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে।
ম্যাসাচুসেটস সেরুটাইপ ক্রস প্রটেকশন করে। স্ট্রেইন মিউটেশনের লাইভ টিকা দেওয়ার পর অনেক সময় প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন- গড় গড় শব্ধ, মাথা ঝাড়া দেওয়া, কনজাংটিবাইটিস এবং ই কলাই সংক্রমণ হতে পার।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৮অক্টোবর ২০২২