আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে দেশে ব্রয়লার মুরগীর খামার শুরু হয়। প্রথমের দিকে মানুষ এই মুরগী মুখেই তুলতে চায়নি। শুরুর দিকের খামারিদের এই মুরগী বাজারে বিক্রি করতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে। তারপর তো ইতিহাস। দেশে আমিষের চাহিদার অনেকখানি পূরণ করছে আজ ব্রয়লার মুরগী। যদি এই মুরগীর দুর্নাম এখনো ঘোচেনি। থলথলে শরীরের কারণে এমনকি শহরের ছেলেমেয়েদেরও অনেকে ব্রয়লার মুরগী বলে!
যাই হোক কম সময়ে অধিক উৎপাদন, স্বল্পমূল্য এবং দেশি মুরগী দিন দিন দুর্লভ হয়ে যাওয়ার কারণে ব্রয়লার মুরগী জনপ্রিয় হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি। তবে এই দ্রুত জনপ্রিয়তাই একসময় কাল হয়ে গেছে। ঘরে বন্দী অবস্থায় দ্রুত ওজন বৃদ্ধিমূলক প্রচুর খাবার দেওয়ার কারণে বেশি বেশি রোগবালাই হতে শুরু করলো। মানুষও ওষুধের খরচ কমাতে শুরু করলো গণহারে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো। বর্তমানে বাজারে প্রক্রিয়াজাত পোল্ট্রি ফিডেও অ্যান্টিবায়োটিক থাকে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ফলে দুটি কারণে এখন মানুষ ব্রয়লার মুরগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এক. নরম মাংস দুই. বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের অধিক ব্যবহার।
এ পরিস্থিতিতে নতুর আশার আলো দেখাচ্ছেন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকেরা। তারা বাউ-ব্রো নামে মুরগীর নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। এই মুরগীতে দেশি মুরগীর স্বাদ পাওয়া যাবে। বাকৃবির পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফ আলী এবং অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান মোল্লা দীর্ঘদিন গবেষণা করে বাউ-ব্রো সাদা এবং বাউ-ব্রো রঙিন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রঙিন জাতটির মাংসের স্বাদ ও রং একেবারে দেশি মাংসের মতো। আর সাদা জাতটির মাংস ব্রয়লারের চেয়ে শক্ত ও মুখরোচক। সাদা জাতটির উৎপাদন খরচ গড়ে কেজি প্রতি ৮৬ টাকা এবং রঙিন জাতটি কেজিপ্রতি ১০৯ টাকা। আর বাজারে জাত দুটির বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি যথাক্রমে ১২৫ ও ১৬০ টাকা।
এছাড়া ব্রয়লারের মতো মুরগীর বাচ্চা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না খামারিদের। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশেই সাশ্রয়ী দামে বাচ্চা উৎপাদন করা যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা ছাড়া জাত দুটিতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নেই। নয়টি জেলায় বিভিন্ন খামারে এই মুরগীগুলো পালন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গত দুই বছরে ৭৫ জন খামারিকে এই মুরগি লালন-পালনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৯অক্টোবর ২০২২