এন্টিবায়োটিক ছাড়া এখন মুরগী পালা বাংলাদেশেই সম্ভব। শুধু সদিচ্ছা থাকাটা প্রয়োজন। ইফিশিয়েন্ট ম্যানেজমেন্ট বা দক্ষ ব্যবস্থাপনা হলেই হবে লেয়ার মুরগী লালন পালনের ক্ষেত্রে কয়েকটি কাজ করতে হবে। তার আগে জেনে নেই কি কি রোগ মুরগীতে বেশি হয়। দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
(১) ভাইরাসজনিত রোগ : গামবোরো, রানীক্ষেত, ম্যারেক্স, আইবি, এআই, ইডিএস ইত্যাদি। অন্য আরো কয়েকটি রোগ হলেও এই কয়েকটি রোগের ভ্যাক্সিন দিলেই হয়।
(২) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ : যেমন – মাইকোপ্লাজমা, সালমোনেলা, এন্টারাইটিস ইত্যাদি। আরো রোগ থাকলেও এগুলোই বেশি হতে দেখা যায়।
আমরা জানি মূলত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মুরগিকে সুস্থ রাখা সম্ভব। আর এর জন্য প্রয়োজন ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রাম। ভ্যাক্সিন আবার দুই ধরনের :
(১) আর্টিফিশিয়াল– যা বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করে থাকে। বাজারে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধের জন্য এগুলো পাওয়া যায়। বিশেষ করে ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধ করতেই এই ধরনের ভ্যাকসিনের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে এগুলোর প্রয়োগ সঠিক নিয়মে করলেই হয়।
(২) ন্যাচারাল ভ্যাক্সিনেশন – এই ক্ষেত্রে মুরগী পরিবেশের জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে সেই জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে থাকে।
এই ন্যাচারাল ভ্যাক্সিনেশন এর গুরুত্ব আমরা খুবই কম দেই। বার বার এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে আমরা মুরগীকে নির্ভরশীল করে থাকি। সেল্ফ ইমিউনিটি বা দেহের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে দেই না।
বরং আমাদের উচিৎ হবে এই সিস্টেমের প্রতি গুরুত্ব দেয়া।
পাশাপাশি কিছু ব্যবস্থাপনা থাকাটাও জরুরি: যেমন-প্রতিদিন একই সময়ে খাদ্য প্রদান, বিশুদ্ধ পানি প্রদান, লাইটিং প্রোগ্রাম মেনে চলা, রাত্রে লাইট বন্ধ করার সময় খাদ্যের পাত্রে খাদ্য না রাখা, সকালে খাদ্য প্রদানের পুর্বে খাদ্যের পাত্র পরিষ্কার করা ইত্যাদি। এই নিয়ম মেনে চললে সালমোনেলা সহ বেশিরভাব ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
অন্যান্য ব্যবস্থাপনা যেমন- ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, মিনারেলস, এমাইনো এসিড এগুলোর অভাব যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
পরিবেশের জীবাণু আশির্বাদ যা ন্যাচারাল ভ্যাক্সিনেশন এর জন্য প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত জীবাণু ক্ষতির কারণও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বায়োসিকিউরিটি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
একটি উদাহরণ – চাটমোহর এর একজন খামারি ভাই গত ১০ মাসে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ না করেও তার মুরগীকে ভালো রাখতে পেরেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
এই ক্ষেত্রে ইউরোমিক্স-প্রো নিয়মিত, ইউকা-ম্যান স্প্রে, প্রোএমাইনো প্লাস, ইউরোক্যাল ফোর্ট লিকুইড, ম্যাগনো প্লান সহ কয়েকটি সাপোর্ট দিয়েছেন মাত্র।
আমার অভিজ্ঞতা হলো, আর্টিফিশিয়াল ভ্যাকসিন দিয়ে ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধ আর ন্যাচারাল ভ্যাক্সিনেশন এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ প্রতিরোধ।
কিছু মুরগী অসুস্থ হতেই পারে, দ্রুত অসুস্থ মুরগীকে বাইরে রেখে চিকিৎসা দিন। সুস্থ হলে আবার ভিতরে আনুন। শুধু মাত্র অসুস্থতার সংখ্যা বেড়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসা দিন।
এন্টিবায়োটিক শেষ অস্ত্র হিসেবেই চিন্তায় রাখুন। তবে নিয়মিত প্রোবায়োটিক প্রয়োগেই সম্ভব এন্টিবায়োটিক ফ্রী মুরগী পালা।
লেখক: মো. রেজাউল হক রেজা
সিইও, প্রোটেক্ট এনিমেল হেলথ।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৫অক্টোবর ২০২২