ঋতু পরিবর্তন অন্যান্য সব প্রাণির মতো মুরগির জীবনমান এবং উৎপাদন সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশে ষড়ঋতুর দেশ হলেও মূলত গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতকাল এ তিনটি ঋতু দৃশ্যমান হয় এবং এর পরিবর্তনের প্রভাব মানুষসহ সব প্রাণির মতো মুরগির স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। তাই মুরগির জীবন প্রবাহ আরামদায়ক, স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এ সময়ে বিশেষ কিছু ব্যবস্থাপনা দরকার হয়। এছাড়া মুরগির স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পর্যায়ে প্রতিপালনের জন্যও কিছু অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। খাদ্য ও পুষ্টি এদের মধ্যে অন্যতম। শীতকালে মুরগীর খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা কেমন হওয়া উচিত তা এখানে আলোকপাত করা হলো-
জীবনের জন্য শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন ও পানি এ ছয়টি পুষ্টি উপাদান অত্যাবশ্যক। দৈহিক বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং প্রজনন স্বাভাবিক রাখতে সরবরাহকৃত খাদ্যে এসব পুষ্টি উপাদান প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য। তবে নানাবিধ কারণের মধ্যে পরিবেশগত প্রভাবের কারণেও অনেক সময় এগুলো সঠিক ব্যবহার হয়না। এর ফলে মুরগির পারফরমেন্স (বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং প্রজনন ) বাধাগ্রস্ত হয়। এ বাধাসমূহ দূর করে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি গ্রহণ এবং ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপই হলো পুষ্টি ব্যবস্থাপনা। হ্যাচিং থেকে শুরু করে মুরগির উৎপাদনকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। সুষম খাদ্য সরবরাহ করলে দৈহিক বৃদ্ধি যথাযথ হবে। দৈহিক বৃদ্ধি যথাযথ হলে মুরগির রিপ্রোক্টটিভ অর্গানসমূহের সঠিক ডেভলপমেন্ট হবে।
ডিমপাড়া মুরগীর জন্য সাধারণত স্পেশালাইজড রেশন (লেয়ার রেশন) সরবরাহ করা হয়। শীতকালে মুরগিকে উষ্ণ রাখতে হলে মুরগির খাদ্যে ক্যালরির পরিমাণ বাড়াতে হবে। যদি মুরগি নিজেকে উষ্ণ রাখতে সক্ষম হয় তাহলে উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে এবং অসুস্থতা ও মৃত্যুহার কম হবে। শীতকালে লেয়ার রেশনে প্রোটিনের পরিমাণে কমিয়ে ১৭% পর্যন্ত রাখতে হবে এবং শীতকালে লেয়ার রেশনে প্রোটিনের আদর্শ পরিমাণ এটাই। খাদ্যে ক্যালরির পরিমাণ বাড়াতে স্টার্চের পরিমাণ বাড়াতে হবে কারণ স্টার্চজাতীয় খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকে এবং ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে বলে এ ধরনের খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়।
ভুট্টা হলো এ ধরনের একটি খাদ্য উপাদান। সূর্যালোকের কারণে শীতকালে দিনের তাপমাত্রা রাতের চেয়ে বেশি থাকে তাই সন্ধ্যার পরে খাদ্য প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে শরীরে তাপ উৎপাদনের কারনে রাতের ঠাণ্ডা সময়ে মুরগি গরম থাকবে। মুরগি সাধারণত দু’টি প্রধান উদ্দেশ্যের জন্য খাদ্য গ্রহণ করে থাকে-
– দৈহিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য শক্তির উৎস হিসেবে।
– উৎপাদনের জন্য (হাড়ের গঠন, মাংস উৎপাদন বা দৈহিক বৃদ্ধি, পালক গজানো এবং ডিম উৎপাদনের জন্য) হিসেবে।
আমরা জানি যখন পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যায় তখন দৈহিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুরগি বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করে। বেশি এনার্জি প্রাপ্তির জন্য যখন মুরগি বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করে তখন অন্যান্য পুষ্টিও বেশি পরিমাণে গৃহিত হয় যা শরীরের কোনো কাজে লাগে না। এ অপচয় রোধ করার জন্য রেশনে বেশি এনার্জিসমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান যোগ করতে হবে। গরমকালের তুলনায় শীতকালে মুরগির ঘরে বেশি পরিমাণে খাদ্য পাত্র দিতে হবে।
এটা প্রমাণিত যে, ব্রয়লারের যথাযথ দৈহিক বৃদ্ধির জন্য গরমকালে রেশনে ২৩% প্রোটিন এবং ৩১০০ Kcal ME/kg এবং শীতকালে রেশনে ২৩% প্রোটিন এবং ৩৪০০ Kcal ME/kg প্রয়োজন হয়েছে। পরিবেশের তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য ক্যালরি গ্রহণে মুরগিপ্রতি গ্রীষ্মকালে ২৪০-২৭০ এবং শীতকালে ২৮০-৩২০ মেটাবলিক এনার্জির প্রয়োজন হয়। শীতকালে মুরগি বেশি খাদ্য খায় বলে খাদ্য খরচ বেড়ে যায় এবং এর ফলে মোট উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এই বিষয়টি বিবেচনা করে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে খাদ্য খরচ কমাতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৫অক্টোবর ২০২২