রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বাংলাট গ্রামে জাহাঙ্গীর পরিবার নিয়ে থাকেন। বাবা মারা গেছেন অনেক দিন আগে। ফরিদপুর ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে সপ্তম সেমিস্টার পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর অর্থাভাবে আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার।
জাহাঙ্গীরের বাবার ছিল ব্রয়লার মুরগির খামার। ছোটবেলা থেকেই খামারে বাবাকে সাহায্য করেছেন। ভাগ্য বদলের আশায় একসময় বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। পরে দেশে চলে আসেন। কিছুদিন বেকার থাকার পর আবারও ভারতে চলে যান। উদ্দেশ্য সেখানে কোনো কাজের ব্যবস্থা করা। সেখানে তার এক বন্ধুর মুরগির খামার দেখে নিজেও আগ্রহী হলেন বিদেশি জাতের মুরগির খামার গড়তে। তখন দেশে ফ্যান্সি মুরগির খামার ছিল না। দু-একজন পুষতেন শুধু শখের বশে।
২০১৬ সালে ভারত থেকে ফেরার পথে ওই বন্ধুর কাছ থেকে পাঁচটি ফ্যান্সি মুরগি নিয়ে এসেছিলেন। সেটা দিয়ে তার খামারের যাত্রা শুরু। অল্প কয়েক দিনেই মুরগি ডিম দিল। ডিম ফুটে বাচ্চা হলো।
বন্ধুর পরামর্শ ছাড়াও ইন্টারনেট ঘেঁটে ফ্যান্সি জাতের মুরগি পালনের কৌশল রপ্ত করেন। আর বাবার খামারে ব্রয়লার মুরগি পালনের অভিজ্ঞতা তো ছিলই। কিছুদিনের মধ্যেই জাহাঙ্গীর দেখলেন, দেশে এই মুরগির বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে শৌখিন ব্যক্তিরা এ ধরনের মুরগির প্রধান ক্রেতা। দামও ভালো।
এবার তিনি পুরোদমে বাণিজ্যিকভাবে ফ্যান্সি মুরগি উৎপাদনে মন দিলেন। ইত্যাদি অ্যাগ্রো অ্যান্ড হ্যাচারি দিলেন খামারের নাম। তিন শতক জায়গাজুড়ে ৬০টি খাঁচায় তিনি মুরগি রেখেছেন। এখন প্রায় ৪০ জাতের মুরগি রয়েছে তার খামারে।
এগুলোর মধ্যে ব্রাহামা, সিল্কি, কাদাকনাথ, সিলভার সেব্রাইট, গোল্ডেন সেব্রাইট, সিলভার পলিশ ক্যাপ, অর্পিংটন, ইয়োকোহামা, অনাকাদুরি, ফনিক্স, সুমাত্রা, কলম্বিয়ান লাইট ব্রাহামা, মলটেট কোচিন, ফিজেল কোচিন, সুলতান, এরাকোনা, উইন্ডোট গোল্ডেন, উইন্ডোট সিলভার, বেলজিয়াম বেয়ার্ড, মিসরীয় ফাওমি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মুরগির দাম প্রজাতিভেদে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মতো। কিছুদিন আগে উইনডট জাতের এক জোড়া মুরগি এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জাহাঙ্গীর জানান।
বর্তমানে জাহাঙ্গীরের খামারে বড় এবং বাচ্চা মিলিয়ে প্রায় ৩০০ মুরগি আছে। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ লাখ টাকা। বছরে তিনি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মুরগি বিক্রি করেন। মুরগির খামারে জাহাঙ্গীরের ভাগ্য বদলেছে। খামারের লাভের টাকায় ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ দিচ্ছেন। কিছু জমিও কিনেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেখতে অনেক সুন্দর। খেতেও ভালো বলে শৌখিন মানুষ এই মুরগি কেনেন। বাচ্চা এবং বড়, দুই ধরনের মুরগি বিক্রি করি। সাধারণত অনলাইনে বেশি বিক্রি হয়। মুরগির ডিম থেকে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করি। কোনো কোনো সময় আমদানিকারকদের মাধ্যমেও মুরগি সংগ্রহ করি। বিদেশে গিয়েও অনেক জাতের মুরগি এনেছি।’ সব খরচ বাদেই খামার থেকে তার আয় মাসে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। কোনো কোনো মাসে তা লাখ ছাড়িয়ে যায় বলে জানান জাহাঙ্গীর।
সাধারণ মুরগির মতো দুই বেলা খাবার দিতে হয় বিদেশি জাতের এই মুরগিগুলোকে। ভ্যাকসিনও দেওয়া লাগে। শীতকালে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে। খাঁচা পদ্ধতিতে পালন করায় রোগবালাই একটু কম হয়। তিনি জানান, দেশের বাইরে এই মুরগির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সুযোগ না থাকায় রপ্তানি করতে পারছেন না। পোষা পাখির মতো এই মুরগিগুলোকেও পোষ মানানো যায়। জাহাঙ্গীরেরও কিছু পোষা মুরগি আছে। যারা বাসায় তার সঙ্গেই থাকে।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কেউ যদি শখ থেকে এই মুরগি লালন-পালন করতে চান, তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে, শুরুতেই সব বড় মুরগি কেনার দরকার নেই। দু-একটি দেশি জাতের মুরগি দিয়ে শুরু করতে পারেন। তারপর বিদেশি জাতের এক জোড়া বাচ্চা কিনলেন। আগে মুরগি পালনের কৌশলগুলো শিখতে হবে, অভ্যস্ত হতে হবে। বুঝেশুনে শুরু করলে ভালো হবে।’সূত্র: কালের কণ্ঠ
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৯অক্টোবর ২০২২