স্বাভাবিকভাবেই ঝাঁকের দেশি মুরগিগুলো ৫-৬ মাস বয়স থেকে ডিম পাড়ার উপযোগী হবে। ডিম পাড়া শুরু করলে প্রতিদিন সকালে তাদের বিরক্ত না করে খুব সাবধানে ডিমগুলো সংগ্রহ করতে হবে এবং ডিমের ওপর ডিম সংগ্রহের তারিখ লিখে রাখতে হবে। এতে ডিমের বয়স হিসাবে রাখতে পারবেন। অতঃপর ডিমগুলো ঘরের সবচেয়ে নিরাপদ ও ঠান্ডা স্থানে তুষের পাত্রে রাখতে হবে।
এ সময় ডিমের মোটা দিক উপরে রাখতে হবে কারণ ডিমের ভ্রুণ এই অংশেই থাকে এবং এ অংশের মাধ্যমেই শ্বাস নেয়। অতঃপর ডিমে তা দেওয়ার বয়স হলে একই বয়সী সকল ডিমের তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে গরম কালে ৫-৬ দিন বয়সের ডিম এবং শীতকালে ১০-১২ দিন বয়সের ডিম তা দেওয়ার জন্য নির্বাচন করতে হবে।
উমে আসা মুরগির পরিচর্যাঃ
উমে আসা মুরগি বলতে বোঝায় যেসব মুরগি ডিম পাড়ার পর ডিমে তা দিতে প্রস্তুত। ডিমে ভা্লোভাবে তা দেওয়ানোর জন্য এদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশি মুরগি নিরিবিলি ও কিছুটা অন্ধকার পরিবেশে তা দিতে পছন্দ করে। তাই তা দেওয়ার ঘরের চারপাশে কালো কাপড় টাঙিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও মুরগিগুলোকে উকুন মুক্ত করে নিতে হবে। এজন্য বিষকাটালি পাতার রস মুরগির গায়ে মাখা যেতে পারে।
আবার ন্যাপথলিন গুঁড়া ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে মুরগির গায়ে লেপে দিলেও উকুন মরে যাবে। এছাড়াও ‘সাইমিন ভেট’ নামক ওষুধ পানিতে মিশিয়ে মুরগিকে গোসল করালেও উকুন মারা যাবে। তবে এক্ষেত্রে মুরগির মুখ অবশ্যই বেঁধে নিতে হবে। নয়তো বিষাক্ত পানি খেয়ে মুরগি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, একটি দেশি মুরগির উর্বরতা বয়সের সাথে সাথে কমতে থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর ডিম পাড়া মুরগি বদল করতে হবে। অর্থাৎ বয়স্ক মুরগি বিক্রি করে নতুন মুরগিকে জায়গা দিতে হবে। সাধারণত আড়াই বছর অবধি একটি দেশি মুরগি পূর্ণ উর্বরতার সাথে ডিম পাড়ে। তাই এ সময়ের পরে মুরগি বেচে দেয়াই শ্রেয়।
ডিমে তা দেওয়ার ব্যবস্থাঃ
ডিমে তা দেওয়ার জন্য আলাদা মাটির বড় পাত্র অথবা বাঁশের ঝুড়ি নিন। এক্ষেত্রে তা নূন্যতম ১৮ ইঞ্চি চওড়া ও গোলাকার হতে হবে। যদি ঝুড়ি ব্যবহার করে থাকেন তবে প্রথমেই কাগজ দিয়ে নিন। অতঃপর পাত্রের নিচে ন্যাপথলিন মেশানো শুকনো ছাই দুই ইঞ্চি করে বিছিয়ে দিতে হবে। তার ওপর খড় বিছিয়ে ডিম রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পাত্রের মুখ থেকে গভীরতা যেন ৮-১০ ইঞ্চির বেশি না হয়। তারপর ডিমের ওপর মুরগিকে উম দেওয়ার জন্য বসিয়ে দিতে হবে। পাত্রে এমন সংখ্যক ডিম রাখতে হবে যেন প্রত্যেকটি ডিম মুরগির পালকের নিচে ভালোভাবে থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই বিষয়টি তা হলো, অবশ্যই তা দেওয়ার পাত্রের সামনে খাবার ও পানির পাত্র রাখতে হবে। এতে করে মুরগি ডিমে তা দেওয়া অবস্থাতেই খেতে পারবে। এটি খুবই জরুরী কারণ বার বার খাওয়ার জন্য উঠলে তা দেওয়া ব্যহত হবে। আবার অনেক সময় মুরগি উঠতে চায় না। ফলে না খেয়ে শুকিয়ে যায়। যার ফলে পরবর্তীতে ডিম দিতে অনেক দেরি হয়।
ডিমের উর্বরতা পরীক্ষা ও পরিচর্যাঃ
সব ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে না। যেসব ডিম থেকে ফোটে সেগুলোকে বলে উর্বর ডিম। উর্বর ডিম চিহ্নিত করতে ডিমে তা দেওয়ার এক সপ্তাহ পরে রাতের বেলা ডিমগুলো বের করে একটা একটা করে টর্চের আলো মেরে পরীক্ষা করতে হবে। এ সময় ডিমের ভেতর লাল শীরা দেখতে পেলে বোঝা যাবে যে ডিম উর্বর। কিন্তু দেখা না গেলে ধরে নিতে হবে যে ডিমটি থেকে বাচ্চা হবে না। তখন ডিমটি খেয়ে ফেলতে হবে অথবা বিক্রি করে দিতে হবে। এই পরীক্ষা সূর্যের আলোর দিকে ধরেও করা যায়।
ডিমের আরেকটি পরিচর্যা হলো এর আর্দ্রতা বজায় রাখা। বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকলে অনেক সময় বাচ্চা ডিমের ভেতরেই শুকিয়ে মারা যায়। তাই প্রচন্ড গরম বা প্রচন্ড শীতের সময় ডিমের আর্দ্রতা বজায় রাখতে কৃত্রিম প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। তা দেওয়ার প্রথম দিন থেকে ১৮-২০ দিন অবধি কুসুম গরম পানিতে সুতি কাপড় ভিজিয়ে ভাল করে চিপে নিতে হবে। এরপর তা দিয়ে ডিম আলতো করে মুছে দিতে হবে। এছাড়াও আঙুলের সাহায্যে পানির ছিটে দিয়েও ডিমের আর্দ্রতা বজায় রাখা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ডিম কোনভাবেই অতিরিক্ত ভিজে না যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০২ নভেম্বর, ২০২২