ড্রাগন চাষে লাখপতি ইসমাঈল!

144

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুর এলাকার মো. ইসমাঈল হোসেন। পিরিজপুরের মহিশালবাড়ী থেকে চারা সংগ্রহ করে বছর তিনেক সময় ধরে চাষ করছেন ড্রাগন। গত ২ বছরে ৩ বিঘা জমি থেকে ২৫ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করেছেন বলে দাবি এ চাষির।

বংশপরম্পরায় বাবা হেদায়েতুল ইসলামে তেলের ব্যবসা ছিল। তারপর ইসমাঈল সেই ব্যবসার হাল ধরেছিলেন। ৫ বছর আগে তেলের ব্যবসা ছেড়ে কৃষিতে মনোযোগ দেন এ চাষি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা দেখা যায়, নতুন ১২ বিঘার ড্রাগন বাগানে আগাছা পরিষ্কার করছেন। সঙ্গে আরও ৪ জন। ঢালু বরেন্দ্র বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে বেড়ে উঠছে ড্রাগন চারা। সারিসারি সিমেন্টের খুঁটিতে লোহার তার আটকানো। তাতে গা বেয়ে উঠছে তারা। শিকড় খুুঁটির সঙ্গে জড়িয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছে শীর্ষে ওঠার। তারপরই কাক্সিক্ষত ফল দেবে পাহাড়ি এ ফসল।

তিনি বলেন, ‘৩ বছর আগে ৩ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি। এরপর ড্রাগন চাষের জমি পর্যায়ক্রমে বাড়ানোর চেষ্টা করি। ৩ বিঘা জমি ছিল আমার বাবার। চারদিকে মেহগনি গাছ থাকলেও মাঝখানে ফাঁকা। একজন পরামর্শ দিলো ড্রাগন চাষের। তারপর শুরু। গত ২ বছরে ২৫ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয়েছে। ড্রাগনের জন্য এবার ১২ বিঘা ২০ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে লিজ নিয়েছি। আমার মোট জমি ১৫ বিঘা, জমি তৈরি করতে যে টাকা খরচ হয়েছে তার আগের ৩ বিঘা জমির ফলন দিয়ে। ১৮ মাসে ফলন দেয়। এক বছরে সব টাকা তুলে আগামী বছর যা উৎপাদন হবে সেটি হবে পুরোটাই লাভ।’

চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সমান ড্রাগনে ফলন এ উপজেলা কিংবা জেলার কেউ পেয়েছে কি না গ্যারান্টি দিতে পারি। আমি রাসায়নিক সার খুব কম ব্যবহার করি। কারণ তাতে ফলের মান ভালো থাকে। জৈবিক সার হিসেবে পোলট্রির লিটার (মল) গাছের গোড়ায় দিই। সামান্য রাসায়নিক সার ওষুধ যা লাগে তাতে গাছ ভালো থাকে। মেজর কোনো রোগ বালাই ড্রাগনের নেই। চারা লাগানোর ১৮ মাস পর ফল তোলা যায়। আস্তে আস্তে ফলন বাড়ে।

ইসমাঈল বলেন, এক বিঘা জমি থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব। কিন্তু প্রথমে ইনভেস্ট করতে হয়। ৩ লাখ টাকা খরচ করতে হবে চারা, সিমেন্টের খুঁটি, তার, পানির ব্যবস্থা, শ্রমিক, সারসহ আনুষঙ্গিক যা লাগে। তারপর থেকে গাছ বড় হলে ফল কেটে বিক্রি। হাটেও নিয়ে যেতে হয় না। ঢাকা থেকে গাড়ি আসে মাল তুলে দিই, টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয়। কোনো ঝামেলা নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে চারা বিক্রির জন্য নানা বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এসব বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে অনেক চাষি ড্রাগন চাষ করে লোকসান হয়। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি চারা বিক্রির জন্য বলছি না। আমার কাছে অসংখ্য মানুষ চারা নিয়ে যায়। আমি চারা দেব একটা টাকাও নেব না। ফল হবে, বিক্রি হবে তারপর টাকা দেবে। ফলন হওয়ার পর টাকা নেব। আমার এই ৩ বিঘার বাগান থেকে ২৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। কারণ জাত ভালো ছিল। রেড জাতের কারণে বাজারে চাহিদাও আছে। কেউ যদি চারা নিতে চায় তাকে ফ্রি দেব।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ফলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। ফল উৎপাদনের দিকে নজর দিয়েছে সরকার। বিদেশ থেকে যে পরিমাণ ফল আমদানি করা হয় তা যদি দেশে উৎপাদন সম্ভব হয় তাহলে দেশের টাকা দেশে থাকবে। দেশের কৃষকরা লাভবান হবে। কৃষিতে আধুনিকীরণ প্রক্রিয়ায় সরকার প্রচুর অর্থব্যয় করছে যেন দেশ স্মার্ট কৃষির দেশ হিসেবে গড়ে ওঠে।