অড়হরের হালুয়া, কাবাবসহ ৭ পণ্য উদ্ভাবন

180

অড়হর গাছের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মুখরোচক ৭টি পণ্য উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির। অড়হর গাছ থেকে সফলতা পাওয়া উদ্ভাবিত পণ্যগুলো হলো- শুকনো বীজের অড়হর-রুটি, অড়হর-পুরী, অড়হর-সিংগাড়াসহ সেদ্ধ কাঁচা বীজের পেষ্ট দিয়ে অড়হর-হালুয়া ও অড়হর-কাবাব, অড়হর বীজ ভাজা এবং কাঁচা বীজের সবজি।

বাংলাদেশে অড়হর একটি অপ্রচলিত কাষ্ঠল উদ্ভিদ। যার বীজ ডাল জাতীয় ফসল এবং গাছ খড়ি হিসেবে অধিক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই গাছের জন্য আলাদা করে জমি তৈরি করতে হয় না, প্রয়োজন হয় না পরিচর্যার। বাসত বাড়ির পতিত জায়গায় বীজ বপন করলেই গাছ হয়। গাছ থেকে যে বীজ হয় সেটিই ডাল জাতীয় ফসল। অন্যান্য ডালের মতোই এই ডালে প্রোটিনের পরিমাণ ২১ শতাংশ। একদম খরচ ছাড়াই এই ডাল পাওয়া যায় বলে একে গরিবের ডাল বললে ভুল হবে না। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পশুখাদ্য, জ্বালানী, বেড়া এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ডাল ফসল।

প্রধান গবেষক ড. ছোলায়মান আলী ফকির জানান, অড়হর-রুটি ভাতের বিকল্প খাদ্য হিসেবে প্রধান খাদ্য চালের উপর চাপ কমাতে কার্যকর। অড়হর ডালের পেস্ট ময়দার সঙ্গে মিশিয়ে এই অড়হর-রুটি তৈরী করা হয়েছে। ভাতের চেয়ে কার্বোহাইড্রেট অনেকাংশে কম থাকায় ওজন কমাতে কার্যকর এই রুটি।

তিনি আরও জানান, খুব স্বল্প খরচেই ডালের চাহিদা পূরণে এ গাছ ভূমিকা রাখবে। অড়হর গাছটি খড়া সহনশীল ও পতিত জমিতে দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় স্বল্প খরচে এবং স্বল্প পানি ব্যবহারে এটি বৃদ্ধি পায়। তরকারিতে মটরশুঁটির বিকল্প ডাল জাতীয় খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে এটি।

পুষ্টি উপাদান ও ঔষধিগুণ সম্পর্কে গবেষক জানান, অন্যান্য ডালের মত অড়হর বীজে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ বিদ্যমান। কম চর্বি, বেশী আঁশ ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকায় এ ডাল একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। উচ্চ মাত্রায় আঁশ থাকায় হজমে সাহায্য করে এটি। সর্বোপরি নি¤œমাত্রায় কোলেষ্টেরল এবং উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম ও আঁশ বিদ্যমান থাকায় অড়হর বীজ হৃদরোগের ঝুকি কমায় । সবুজ পাতার রস জন্ডিস নিরাময়ে কার্যকর। অড়হর ডালে আয়রনের উপস্থিতির কারণে রক্তশুন্যতা উপশমে সাহায্য করে। পটাশিয়ামের উপস্থিতির করণে রক্তচাপ প্রশমন করে। এছাড়াও অড়হর ডাল ওজন কমাতে ভিটামিন-বি, রিবোফ্লাবিন ও নিয়াসিনের উপস্থিতিতে দেহে শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।

ফলন সম্পর্কে গবেষক জানান, অড়হরের জাত ভেদে গাছ প্রতি ২’শ থেকে ৫’শ গ্রাম শুকনো ডাল এবং ৫শ’ ৫০ থেকে ৯শ’ গ্রাম সবজী বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও জমিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৪’শ থেকে ৮’শ কেজি ডালের ফলন হয়ে থাকে। গাছ জালানী ও বেড়া, পাতা ও কচি ফল গোখাদ্য, শেকড়ের রাইজোবিয়াম ব্যাক্টেরিয়া মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি সব মিলিয়ে এ ডালের ফলন অন্যান্য যে কোন ডালের চেয়ে লাভজনক ।