বাগানের চারদিকে তাকালে শুধু বরই আর বরই। চার থেকে ছয় ফুট উচ্চতার একেকটি গাছ। ছোট থেকে বড় প্রতিটি গাছে বরইয়ের ভারে ডাল নুইয়ে পড়েছে। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে লাল আপেলের মতো। বরইয়ের এ বাগান গড়ে তুলেছেন নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের চরজুবিলী ইউনিয়নের কৃষক মো. এনায়েত উল্লাহ।
কৃষক মো. এনায়েত উল্লাহ নিজ এলাকায় রৌদ্রোজ্জ্বল ও উঁচু ৮০ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ জমিতে লালশাক, মুলা, ধনিয়া, ক্ষীরা, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচামরিচ, বরবটি, শিম, টমেটো ও বেগুন চাষাবাদ করে বাকি ৫০ শতাংশ জমিতে ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষামূলক বল সুন্দরী বরই ও কাশ্মীরি আপেল কুলÑএ দুজাতের বরই চাষ করেন। এর ব্যাপক ফলন হওয়ায় সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি। এর আগে গত বছর একই জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করে সাড়ে তিন লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেন। এটি কৃষক এনায়েত ও তার বাবা মো. হানিফের সার্বক্ষণিক পরিচর্যার সফলতা বলে জানা যায়।
কৃষক এনায়েতের বাবা মো. হানিফ বলেন, এ জমিটি ইজারা নিয়ে কয়েক বছর চাষাবাদ করছি। গত চার-পাঁচ বছর এ জমিতে ক্ষীরাসহ নানা ধরনের সবজি চাষাবাদ করতাম। গত বছর মার্চের শেষের দিকে উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম স্যার জোরপূর্বক বিনা মূল্যে ২৫০টি বরইয়ের কলম চারা দেন। সেইসঙ্গে ইউরিয়া, মাড়িয়া, এমপি সারসহ নগদ কিছু টাকা দেয়ায় ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষামূলক এ বরই চাষ করি। রোপণের সাত মাসের মাথায় ফল দেয়া শুরু করে। তবে কয়েক মাস আগে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কিছুটা ফল নষ্ট হলেও রোপণের ৯ মাসের মাথায় বরই বিক্রির উপযুক্ত সময় হয়। আল্লাহর অশেষ কৃপায় গাছে ফলন দেখে আমরা খুবই খুশি।
কৃষক এনায়েত বলেন, এ উৎপাদিত বরইয়ের স্থানীয় বাজারের চাহিদা জানতে কয়েক কেজি নিয়ে বাজারে বসে খুচরা প্রতি কেজি ৯০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এমন দাম পেলে সব কুল বিক্রি করে খরচ বাবদ বছর শেষে দুই লাখ টাকার অধিক লাভ করতে পারব বলে ধারণা করছি। তবে এটি দোকানে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগামীতে কৃষি অফিস থেকে আরও সহযোগিতা পেলে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করতে পারব বলে স্বপ্ন দেখছি।
অন্য কৃষকরা বলেন, এখানকার আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যা করার কারণে কুলের ভালো ফলন হয়েছে। প্রত্যেকটি গাছে কুলের ভরে অধিকাংশ ডাল শুয়ে পড়েছে। এ চাষে ঝুঁকি ও খরচ কম এবং লাভ বেশি।
বরই কিনতে যাওয়া রাফি হোসেন বলেন, এ উপজেলায় কয়েকটি বরই বাগান থাকলেও এর মতো সযত্নে পরিচর্যা ও নিরাপত্তাসম্পন্ন বাগান সুবর্ণচরে আর কোথাও নজরে পড়েনি। বরইগুলো খেতেও দারুণ মিষ্টি। তার মতো অন্যরাও যদি ঝুঁকি নেয়, তাহলে এ উপজেলা কৃষিক্ষেত্রে আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম বলেন, কুল চাষে তার লাভ ও উৎপাদন দেখে অন্যান্য কৃষকও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমরা কৃষি অফিসের নির্দেশনায় কৃষকের স্বার্থে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এ উপজেলায় বরই চাষ করা হয় না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় পাঁচ একর জায়গায় সাত কৃষককে উন্নত জাতের উচ্চ মূল্যের ফসল (ফল) উৎপাদন প্রদর্শনী দিয়েছি। এর মধ্যে কৃষক এনায়েত অন্যতম। তার সাফল্য দেখে বরই চাষের উদ্যোক্তা বাড়ছে এবং আগামীতে বরই বাগানের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে এবং স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায়ও সুবর্ণচরের বরই সরবরাহ করা সম্ভব হবে।