শীতে মাঝামাঝিতে হালি পেঁয়াজ রোপণে যখন ব্যস্ত সময় পার করেন চাষিরা, ঠিক তখনি মুড়িকাটা পেঁয়াজই বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে। আর মাত্র ক’দিন পরেই বাজারে উঠতে শুরু করবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এখন ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজের শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ফরিদপুরের চাষিরা। তারা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হতে পারে। যদিও শ্রমিকের মজুরি, কীটনাশকসহ সব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আবাদে খরচ বেড়ে দেড়গুণ হতে পারে বলেও দাবি তাদের। তবে বাড়তি খরচের পরও ভালো ফলন আর শেষ সময়ে পেঁয়াজ আমদানি না করা হলে মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা চাষিদের।
এ মৌসুমে জেলায় চার হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ আবাদ হবে বলে জানিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ। সরেজমিনে জেলার সদরের আদমপুর, অম্বিকাপুর, চরমাধবদিয়া, মোমিন খার হাটসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা কেউ মুড়িকাটা পেঁয়াজের ক্ষেতের শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন।
চরমাধবদিয়ার আবজাল মণ্ডলের ডাঙ্গীর এলাকার চাষি তুহিন মণ্ডল বলেন, আগে বিঘাপ্রতি এ পেঁয়াজ উৎপাদনের ব্যয় হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এবারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। বাজারের বিদেশি পেঁয়াজের আমদানি স্বাভাবিক থাকলে প্রতি একরে যে পেঁয়াজ আমরা উৎপাদন করতে পারব সেটা বিক্রয় করতে পারব লক্ষাধিক টাকায়।
অম্বিকাপুরের মাঠে কাজ করা চাষি মো. রাজর হোসেন বললেন, আগর মুড়িকাটা পেঁয়াজের লাইট (ছোট পেঁয়াজ) রোপণ করেছিলাম, ভালো হয়েছে তবে ঘাসও হয়েছে অনেক।
তিনি আরও বলেন, এখন শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। এ বছর সব কিছুর দর বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষেত-খামার করতে ব্যয়ও বেশি হচ্ছে।
এ মাঠের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর কাজ করছিলেন কৃষক ফরহাদ শেখ। তিনি বলেন, গত বছর এক বিঘায় যে কীটনাশক দিয়েছিলাম, এবার সেই পরিমাণ দিতে গেলে খরচ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে। এ পেঁয়াজে বাজারে ভালো দর না পেলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আশুতোষ মালো বলেন, বাজারের সার, কীটনাশক, লাইট পেঁয়াজের (বীজ) দর বেড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেড়েছে। তাই আমাদের দাবি, সরকার বিদেশি পেঁয়াজ কম আমদানি করলে চাষিদের পুঁজি উঠবে ঠিকঠাক মতো।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হবে, তবে বিদেশি পেঁয়াজের আমদানি কমাতে হবে, তবেই আমরা লাভবান হবো।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ তুলনামূলক একটু বেশি হলেও অল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়।
বছরের এ সময়ে (শীত মৌসুমে) সারাদেশেই পেঁয়াজের ঘাটতি থাকায় মুড়িকাটার চাহিদা থাকে বেশ। এজন্য ভালো দরও পান চাষিরা। তাই চাষিরা বর্ষা শেষের পরপরই মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষাবাদ শুরু করেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক জিয়াউল হক বলেন, চলতি মৌসুমে চাষিরা মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ পেঁয়াজ বাজারের চাহিদা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে চার হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে এ পেঁয়াজের আবাদ হবে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ পেঁয়াজ হেক্টরপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ টন উৎপাদন হয়। আর শীত মৌসুমে দেশে পেঁয়াজের কিছুটা ঘাটতি থাকে। তখন চাষিদের এ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এলে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসে।