কোটালীপাড়ায় কচুরিপানার ভাসমান বেডে সবজি আবাদ

210

গোপালগঞ্জের কোটলীপাড়া উপজেলার জলমগ্ন জমির কচুরিপানার ভাসমান বেডে সবজি আবাদ শুরু হয়েছে। আজ সকালে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের মাচারতারা গ্রামের কচুরিপানার ভাসমান বেডে সবজি চারা রোপণ করা হয়।

এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাসমান বেডে সবজি ও সমলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস, কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ, কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায়সহ কৃষি বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা ও মাচারতারা গ্রামের কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাসমান বেডে সবজি ও সমলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জলমগ্ন জমিতে ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা না রেখে ফসল উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ শুরু করেছি। আমরা কান্দি ইউনিয়নের জলমগ্ন জমির ওপর কচুরিপানা দিয়ে ৪০ মিটার লম্বা ৬০টি ভাসমান বেড তৈরি করেছি। এসব বেডে আমরা লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, করলার ৫ হাজার গাছ রোপণ করব। আজ আমরা ২ হাজার চারা রোপণ করেছি। দ্রুত আরো ৩ হাজার চারা রোপণ করব। এখানে ৪৫ দিনের মধ্যে সবজি উৎপাদিত হবে। এখন থেকে অন্তত ৩০ লাখ টাকার সবজি পাওয়া যাবে। আমাদের তত্ত্ববধানে স্থানীয় ৬০ জন কৃষক এসব সবজি উৎপাদন ও বাজারজাত করবে। এ সবজি খেয়ে তারা পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে রোজগার করবেন। এখান থেকে তাদের প্রতিদিনই ভালো আয় হবে।

ওই কর্মকর্তা অরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার এটি তদারকি করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস কোটালীপাড়ার মাচারতারা গ্রামের ভাসমান বেডে সবজি চাষ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। এ কারণে এটি এত সহজে করা সম্ভব হয়েছে।

কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, কান্দি ইউনিয়নের ৮ হাজার বিঘা জমি প্রায় সারা বছর জলমগ্ন থাকে। এখান থেকে ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে আমরা ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ধারাবাসাইল বাজার -তরুর বাজার খালের কচুরিপানা পরিস্কার করেছি। খালের নাব্যতা ফিরিয়ে এনেছি। ওই কচুরিপানা দিয়ে জলমগ্ন জমির ওপর ভাসমান বেড করে দিয়েছি। এখানে সবজি চারা রোপণ করা হচ্ছে। জলবদ্ধ জমি থেকে পানি নেমে গেছে। কৃষকরা জমি পরিস্কার করছেন। তারা এখানে ধান রোপণ করবেন। এখানে ভাসমান বেডে সবজির পাশাপাশি ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ হবে। এতে ৬ কোটি টাকা মূল্যের ৬০ হাজার মণ ধান উৎপাদিত হবে।

মাচারতারা গ্রামের কৃষাণী রোমেলা বেগম (৫৫) বলেন, এখানে ৩০ বছর ধরে কোন চাষাবাদ নেই। প্রায় সার বছর জমি পানি নীচে থাকে। এ বছর কৃষি বিভাগ কচুরিপানার বেড করে দিয়েছে। এখানে সবজির চারা রোপণ করেছি। খালের কচুরিপানা পরিস্কার হয়েছে। জমি থেকে পানি নেমে গেছে। এখন জমি পরিস্কার করছি। এখানে ধান চাষ করব। কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে ভাসমান বেডের জন্য সবজির চারা দিয়েছে। এখন ধানের চারা ও সার দেবে। এগুলো দিয়ে আমরা এ বছর সবজি ও ধান ফলাবো।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আমরা নিরলস ভাবে কাজ করছি। জলাবদ্ধ জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। কৃষকদের আমরা কৃষি প্রণোদনার পাশাপাশি বিনামূল্যে সবজিও ধানের চারা দিচ্ছি। আমরা কৃষকদের চাষাবাদ বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করছি। তাদের কাছ থেকেও ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি এ বছর কোটালীপাড়ায় ধান ও সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে কৃষক যেমন লাভবান হবে, তেমনি দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এরমধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবান সফল হবে।