ইউক্রেনে চলতি বছর ফের খাদ্যশস্য উৎপাদন কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধের প্রভাবে উৎপাদন ব্যয় লাফিয়ে বেড়েছে। এছাড়া রফতানি নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। খাদ্যশস্য উৎপাদন করে লাভের মুখ দেখছেন না কৃষকরা। ফলে আবাদে আগ্রহ কমছে। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি ইউক্রেন গ্রেইন অ্যাসোসিয়েশন (ইউজিএ) জানায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর দেশটির কৃষি খাতে বিপর্যয় নামে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৃহৎ কৃষি উৎপাদন অঞ্চল। যুদ্ধের কারণে কৃষকরা আবাদ কমিয়ে দেন। চলতি বছরও একই কারণে আবাদ লক্ষণীয় মাত্রায় কমবে। এর প্রভাবে ভুট্টা উৎপাদন ১ কোটি ৮০ লাখ এবং গম উৎপাদন ১ কোটি ৬০ লাখ টনও ছাড়াবে না।
সংস্থাটির প্রধান নিকোলাই গর্বাচেভ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও খামারগুলোয় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এবারো উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমতে পারে। গত বছর রফতানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অনেক কৃষকই লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ বছর একই আশঙ্কায় আবাদে আগ্রহ পাচ্ছেন না তারা। বর্তমানে তাদের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন অলাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউজিএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছর ইউক্রেনে ৫ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে পারে। গত বছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ টন। ২০২১ সালে উৎপাদন হয়েছিল ১০ কোটি ৬০ লাখ টন।
নিকোলাই গর্বাচেভ বলেন, কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর ব্যবহার করে ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমের এখন পর্যন্ত ইউক্রেন ৩ কোটি টন খাদ্যশস্য ও তেলবীজ রফতানি করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে বিকল্প রুট ব্যবহার করেও রফতানি করা হচ্ছে। তবে কৃষ্ণ সাগরীয় করিডোরে কার্গোজট এবং বিকল্প রুটে লজিস্টিকস সংকট ব্যয় বাড়াচ্ছে। যার ফলে মিলগেটেই বাড়ছে পণ্যের দাম।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ভুট্টা। কারণ এটির উৎপাদন, শুকানো ও পরিবহন অন্যান্য শস্যের চেয়ে ব্যয়বহুল। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর যে পরিমাণ ভুট্টার ফলন হয়েছে তার ১০ শতাংশই এখনো উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। কৃষকরা জমি শুকানোর অপেক্ষায় আছেন।
ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী গত মাসে জানান, ২০২২ সালে ইউক্রেনে ২ কোটি ২০ লাখ ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। যা ২০২১ সালের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। এছাড়া গম উৎপাদন কমে ২ কোটি টনে নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের চেয়ে তেলবীজ উৎপাদন ও রফতানি কিছুটা লাভজনক। এ কারণে চলতি বছর সরিষা ও সয়াবিন উৎপাদন প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। তবে মাড়াইজনিত সমস্যার কারণে সূর্যমুখী তেলবীজ উৎপাদন কমার আশঙ্কা রয়েছে।