হাঁসের কলেরা রোগের কারণ ও নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

154

ডাক কলেরা হাঁসের একটি মারাত্মক রোগ। এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত অতি সংক্রামক একটি রোগ। ডাক কলেরা হলে হাঁসের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। আমাদের দেশের প্রায় সব খামার ও বাড়িতে দেখা যায়। এই রোগটি যেকোন সময় যেকোন বয়সের হাঁসের হতে পারে। আক্রান্ত হাঁস, দুষিত খাদ্য ও খামারের ও বাড়িতে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

এটি পাসচুরেলা মালটোসিডা (Pasteurella multocida) নামক অণুজীবের মাধ্যমে হাঁস ( Duck / Water fowl ) আক্রান্ত হয় । সকল বয়সের হাঁস এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল এবং আক্রান্ত হাঁসের মৃত্যুর হার ৫০ % পর্যন্ত হয়ে থাকে । সাধারণত ৪ সপ্তাহ বয়সের পরে হাঁসের কলেরা রোগের ঝুকি বেড়ে যায় ।

হাঁসের ডাক কলেরা রোগ (Disease of Duck cholera of Ducks / Pasteurellosis)

ডাক কলেরা উচ্চ মাত্রার সংক্রামক রোগ যা খুবই মারাত্মক প্রকৃতির ও দ্রুত হাঁসের ঝাকের মধ্যে ছড়িয়ে পরে । এটি একটি ব্যাকটেরিয়া জণিত ছোঁয়াচে ও সংক্রামক রোগ ।

রোগের ইতিহাস (History Disease ) – ফ্রান্সের Chabert (1782 ) ও Mailet ( 1836 ) প্রথম ফাউল কলেরা (Fowl cholera) শব্দ ব্যবহার করেণ । Huppe (1886 ) সালে এ রোগের নাম দেন “Hemorrhagic septicemia” এবং Lignieres (1900 ) সালে এ রোগের নামকরণ করেণ “ Avian pasteurellosis” আর Benjamin ( 1851) সালে খুব ভালোভাবে উপস্থাপন ও নির্দেশনা করেছিলেন যে রোগটি সহাবস্থান দ্বারা ছড়িয়ে যেতে পারে (it could be spread by cohabitation) ও সেই সাথে রোগটির প্রতিরোধ সংক্রান্ত Knowledge অর্জন করেন । প্রায় একই সময়ে Renault , Reynal , and Delafond বিভিন্ন প্রজাতিতে রোগটি ইনোকুলেশনের মাধ্যমে সংক্রমণযোগ্যতা প্রদর্শন করেছে তার বর্ণনা করেছেন ।

হাঁসের কলেরা রোগের লক্ষণ (Signs of Fowl cholera in Ducks ) – প্রথমত হাঁসের খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দিবে । পানি গ্রহণের পীপাসা বেড়ে যাবে এবং হাঁস হঠাৎ মারা যাবে । আক্রান্ত হাঁস শরীরে ব্যথা অনুভব করবে । স্বল্প দুরত্বে হাঁটলেই হাঁস ক্লান্তি বোধ করবে । হাঁসের পা প্যরালাইসিসে আক্রান্ত হতে পারে । কিছু কিছু হাঁসের পায়ের তালুতে ও জয়েন্টে ফুলে (swollen) যেতে পারে এবং পাতল পায়খানা বা ডায়েরিয়া দেখা দিবে ।

পোস্টমর্টেম পরীক্ষা (Postmortem Lesions or Examination ) –

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ লক্ষণ হলো , পেরিকার্ডাইটিস (Pericarditis) ,আর্থ্রাইটিস (Arthritis) , চামড়ার নীচে পেটিকিয়াল ও ইকাইমোটিক হেমোরেজ (Petechial and echymotic hemorrhages under the skin) । চামড়ার নীচে এ ধরণের রক্ত ক্ষরণকে Pink skin বলে । অভ্যন্তরীন অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ (Visceral organs) ও অন্ত্রে (Intestine) সমূহের সিরাস সার্ফেসে (Serous sueface) রক্ত ক্ষরণ দেখা যায় । অন্ত্রে হেমোরেজিক এন্টেরাইাটস (Hemorrrhagic enteritis) পাওয়া যায় । লিভার ও স্পিলিন (Liver and spleen are enlarged) আকারে বড় হয় । হৃদপিন্ড আকারে বড় ও পেরিকার্ডিয়ামে হলুদাভাব ফ্লুয়িড জমা হয় (Pericardium contains yellowish fluid) । হৃদপিন্ডের মাংস পেশিতে হেমোরেজ থাকবে (Haemorrhages in heart muscles are common) ।

চিকিৎসা (Treatment ) – যেহেতু হাঁসের কলেরা রোগ গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া তাই সালফা ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে । সালফাডিমিডিন (Sulphadimidine) / সালফামেজাথিন (Sulphamezathine ) খাবার পানিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে । এছাড়াও অক্সিটেট্রাসাইক্লিন বা ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও অক্সিটেট্রাসাইক্লিন- ২০০ মিলিগ্রাম (Long Acting) হাঁসের মাংসপেশীতে নির্ধরিত মাত্রায় ইনজেকশন করা যেতে পারে । তবে হাঁসকে যে কোন ধরনের এন্টিব্যাকটেরিয়াল ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে একজন ভেটেরিনারিয়ানের সাথে পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্চনীয় ।

হাঁসের কলেরা রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রন (Prevention and Control of Duck cholera ) – হাঁসকে নিয়মিত ডাক কলেরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম ভ্যাকসিন জন্মের ০২ মাস পরে ও প্রয়োজনে বুস্টিং ভ্যাকসিন করতে হবে । পরবর্তীতে প্রাতি ০৬ মাস পর পর ডাক কলেরা ভ্যাকসিন করতে হবে। তবে হাঁসকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ ভেটেরিনারিয়ানের সাথে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে ও ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা যথাযথ ভাবে অনুসরণ করতে হবে।

হাঁস পালনের ক্ষেত্রে খামারিকে জীব নিরাপত্তা বিধি মেনে চলতে হবে । খামরকে জীবাণুমুক্তকরণে খামরে নিয়মিত উন্নতমানের জীবাণুনাশক স্প্রেরে করতে হবে। হাঁসের খামার পরিচালনায় স্বাস্থ্যসম্মত বিধি ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। সাধারণ মানুষের খামারের অভ্যন্তরে প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিসিদ্ধ করতে হবে। এছাড়াও খামারে ইঁদুরের উপদ্রব নিয়ন্ত্রন করতে হবে ও বন্য পাখি বা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে এমন পাখি (Wild birds or free flying birds) খামারে প্রবেশ বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। । আবদ্ধ নোংড়া জলাশয়ে হাঁসকে নামানো থেকে অবশ্যই বিরত রাখতে হবে । রোগাক্রান্ত হাঁস সুস্থ্য হাঁস থেকে দ্রুত পৃথক করে রাখতে হবে।