সিএনজি ও রাইড শেয়ারিং এর ভাড়া নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর এর প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, ক্যাব, বাংলাদেশ অটোরিকশা হালকাযান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা জেলা ফোর স্ট্রোক অটোরিকশা ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, ঢাকা সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি, ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি, ঢাকা রাইড শেয়ারিং ড্রাইভারস ইউনিয়ন, রাইড কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, ক্যাব-যাত্রী প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে সভা আয়োজন করেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের এই আয়োজনকে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অত্যাবশ্যকীয় বলে উল্লেখ করে এই সমন্বয় কার্যক্রম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নগরী চট্টগ্রাম মহানগরীতে সম্প্রসারণের আহবান জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি। অসহায় ও জিম্মি যাত্রীদের ভাড়া আদায় নৈরাজ্য থেকে মুক্তি দিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের এই কার্যক্রমকে অন্ধকারে আশার আলো বলে উল্লেখ করে এ ধরণের উদ্যোগের জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে কৃতজ্ঞতা জানান। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমন্বয় কার্যক্রমের সফলতা কামনা ও কার্যক্রম বৃহৎ নগরীগুলোতে সম্প্রসারণের দাবিতে এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উপরেক্ত দাবি জানান।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির পরও গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য থামছেই না। বিভিন্ন গণপরিবহণে চলাচল করা যাত্রীদের যেন সব ক্ষেত্রেই ভোগান্তির শেষ নেই। পদে পদে হয়রানি ও ঠকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীণ হয়ে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া। বিআরটিএ কিলোমিটার অনুপাতে ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও ভাড়া আদায়ে চলছে নৈরাজ্য। রাজধানীসহ বিভিন্ন মহানগরীতে যারা নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশায় চড়েন তাদের অভিযোগের যেন শেষ নেই। বিআরটিএ এর বেঁধে দেয়া আইন মিটারে কেউ চালান না। অথচ নানান ফঁন্দিতে সিএনজি ভাড়া বেশি নেন চালকরা। ঠিক সময়ে সিএনজি অটোরিকশা না পাওয়া, অন্যান্য পরিবহনের সঙ্কট, যানজটসহ নানা করণে যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। এসব সুযোগে সিএনজি অটো চালকরা বেশি ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করেন। চালকদের শর্ত মেনেই সিএনজি অটোতে চড়তে হয় যাত্রীদের।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চট্টগ্রামে বৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশার পাশাপাশি চলছে অবৈধ সিএনজির সংখ্যাও কম নয়। মনিটরিং না থাকায় পুরো নগরজুড়ে নৈরাজ্য চলছে সিএনজি-অটোরিকশার চালকদের। সিএনজি-অটোরিকশায় কোনো বিশেষ নজরদারি নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত মিটারে চলাচলের বিষয়টি কোনভাবেই দেখছে না। বিমান বন্দর, ট্রেন স্টেশন ও বাস স্ট্যান্ডগুলিতে যাত্রীদের একপ্রকার জিম্মি করে চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন। মিটার থাকলেও চুক্তিছাড়া নড়েন না একজনও। যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে যেতে রাজি না হওয়ার হাজারো অজুহাতও রয়েছে তাদের। প্রতিটি সিএনজি অটোতে মিটারটি যেন শোকেসে সাজানো কোনো বস্তুু। প্রতিটি সিএনজি অটোতে মিটারে লাল বাতিতে মূল্য লেখা আছে কিন্তু নেই কোনো কার্যকারিতা।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ‘পাঠাও’, ‘সহজ.কম’, ‘চলো’, ‘বাহন’, ‘আমার বাইক’, ‘শেয়ার মোটরসাইকেল’, ‘বিডি বাইক’ ও ‘ইজিয়ার’সহ ১৬টির বেশি প্রতিষ্ঠান অ্যাপসভিত্তিক বাইক রাইড শেয়ারিং পরিচালনা করছেন। যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশা নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণের আশায় রাইড শেয়ারিংএ ঝুঁকলেও অতি লোভে এখন রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরা সিএনজি অটোরিকশার মতো ভাড়া নৈরাজ্য করছেন। বেশিরভাগ চালক চুক্তি ছাড়া এক পা-ও নড়ছেন না। নগরীতে সিএনজি অটোরিকশার মতো রাইড শেয়ারিংয়ের বাইকেও ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। বেশিরভাগ সময় অ্যাপে না গিয়ে চালকরা চুক্তিতে যান। এতে যাত্রীদের পকেট কাটা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য ১১টি শর্তে অ্যাপভিত্তিক রাইডিং সেবার অনুমোদন দেয় সরকার। এর মধ্যে ১০ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে-মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে অনলাইনে অভিযোগ করা যাবে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো ফলপ্রসূ কাস্টমার কেয়ার ও অভিযোগ কেন্দ্র ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে প্রতিকার চাইতে যাত্রীকে ভারতে অবস্থিত উবারের অফিসে যোগাযোগ করতে হবে; যা বেশির ভাগ যাত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। উবার বাংলাদেশে অনেক আগে এ ব্যবসা শুরু হলেও এখনও নিজস্ব অফিস স্থাপন করেনি।