সিরাজগঞ্জে দেশি স্বাদে মুরগির নতুন জাত উদ্ভাবন

180

দেশি মুরগির মাংসের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন সিরাজগঞ্জের এক খামারি। এ জাতের মুরগি দেশের আবহাওয়ায় অত্যন্ত উপযোগী। রোগবালাই কম হয় বলে এ জাতের মুরগি পালনে ওষুধের ব্যবহার অনেক। ফলে মাংস অনেক বেশি সুস্বাদু ও নিরাপদ।

জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা আরআইআর লাল রং মোরগ (দাদা) ও মিসর থেকে আনা কালো ও সাদা ফোঁটা ফোঁটা রং ফাউমি (দাদি) মুরগির ক্রসে সিরাজগঞ্জে তৈরি হচ্ছে সোনালি মুরগি। জেলার উল্লাপাড়ার সলঙ্গা থানার চোড়িয়া উজির গ্রামে রাশেদ পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারিতে এ সোনালি মুরগি তৈরি করে সফল খামারির সারিতে নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশে সোনালি মুরগির উদ্ভাবক সাবেক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহ-জামাল।

২০০৭ সালে স্বল্প পরিসরে শুরু করে এই পোলট্রি ফার্ম। তখন ছিল সোনালি লেয়ার মুরগি। পরে ২০১৫ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক বিভাগীয় সহকারী কর্মকর্তা ডা. শাহ-জামাল চাকরি শেষে ফার্মটি পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু করেন।

সরেজমিনে গিয়ে খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালে বার্ড ফ্লুর কারণে খামারের বেশিরভাগ মুরগি মারা যায়। পরে ২০১৮ সালে ছেলের দেয়া টাকায় তিনি আবার শুরু করেন খামার। অক্লান্ত প্রচেষ্টায় খামারটি আজ পরিণত হয়েছে বিশাল খামারে। ভাগ্য ফিরিয়েছেন নিজের চেষ্টা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে। দীর্ঘদিনের সাহস আর দৃঢ় মনোবলেই সফল খামারের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি। ২০১৮-১৯ সালে খামারের মুরগির মাধ্যমে প্রতি মাসে এক লাখ ৬০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছেন।

বর্তমানে পাঁচ বিঘা জমির ওপরে একটি ছয়তলা, একটি তিনতলা বিল্ডিং ও পাঁচটি টিনশেড ঘরে পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি মুরগির খামারটি রয়েছে। মুরগির সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ২০ হাজারে। ফার্মে প্রতিদিন ডিম সংগৃহীত হয় প্রায় ১০ হাজার। তিন দিন পরপর এই খামার থেকে হ্যাচারির মাধ্যমে ২০ হাজার বাচ্চা ফুটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

খামারের শ্রমিক আলতাব হোসেন বলেন, এই খামারে কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চলত আমাদের। কিন্তু বর্তমানে মুরগির খাদ্যের দাম ও ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে খামার মালিকের অনেক লোকসান হচ্ছে। সেইসঙ্গে আমাদেরও সংসার চালাতে অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামার বন্ধ হলে আমাদের চলার মতো কোনো পথ থাকবে না।

রাশেদ পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী (সোনালি মুরগির) উদ্ভাবক সাবেক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহ জামাল বলেন, ‘বাংলাদেশে মুরগির মাংস ও ডিমের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) উদ্ভাবন করে। গবেষণায় আমিও ছিলাম। সে কারণে চাকরির বয়স শেষে নিজেই তৈরি করেছি এই ফার্ম। যুক্তরাষ্ট্রের আরআইআর লাল রং মোরগ (দাদা) ও মিসর থেকে আনা কালো ও সাদা ফোঁটা ফোঁটা রং ফাউমি (দাদি) দিয়ে এই হ্যাচারিতে জš§ হচ্ছে সোনালি মুরগি। সাধারণ মানুষের মাঝে দেশি

মুরগির মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, অথচ দেশি মুরগি বিলুপ্তপ্রায়। দেশি মুরগির মাংসের চাহিদা মেটাতে বিগত কয়েক বছরে সোনালি জাতের মুরগির প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, খুব সহজেই এ মুরগি পালন করা যায়। দেশি মুরগির তুলনায় মাংসের পরিমাণও অনেক বেশি। আশা করা যায়, দেশীয় খামারিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সোনালি মুরগি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলার নতুন ও পুরোনো খামারিরা এই হ্যাচারি থেকে মুরগির বাচ্চা কিনছে। বর্তমানে দেশে মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের মুরগির ব্যবসার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। এ কারণে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেশের বাজারের তেল ও বিদ্যুতের দাম অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারের বাচ্চা অনেক জায়গায় পৌঁছে দিতে দ্বিগুণ ভাড়া এবং খামারে ৩০ শ্রমিকের বেতন দিতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সবমিলে এই খামারে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে এই শিল্প হুমকির মুখে রয়েছে বলে তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার জানান, সোনালি মুরগির খামারটি খুব ভালো একটি খামার। আমাদের দেশের বেকার যুবকেরা একটি করে খামার স্থাপন করে এবং প্রাণিসম্পদ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে খামারের পরিচর্যা করলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবে অনেকেই।