টেংরার কৃত্রিম চাষাবাদের কৌশল

220

আকারে ছোট হলেও টেংরার অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে বেশ। মাছটি নিয়ে আজকের আয়োজন

মাছের নাম টেংরা। নামটি অদ্ভুত, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। অন্যান্য মাছের তুলনায় টেংরায় কাঁটা কম হওয়ায় অনেকের কাছে বেশ প্রিয়। একসময় খালবিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে এ মাছ দেখা যেত। খালবিল কমে যাওয়া ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এর প্রজনন বৃদ্ধি না পেয়ে বরং হ্রাস পেয়েছে। অথচ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ মাছকে বাঁচিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য টেংরার কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে চাষ করে তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। টেংরা চাষের জন্য কিছু কৌশল ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি

টেংরা চাষযোগ্য পুকুরের আয়তন হতে হবে অন্তত আট থেকে ১০ শতাংশে। এর গভীরতা হবে এক মিটার। মাছ ছাড়ার আগে পুকুরটি শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনো পুকুরের প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে চুন দিতে হবে। চুন দেওয়ার পাঁচ থেকে ছয় দিন পর ইউরিয়া, টিএসপি ও গোবর সার ব্যবহার করতে হবে। এরপর সূক্ষ্ম নাইলন জালের মধ্য দিয়ে পানি প্রবেশ করাতে হবে। পানি দেওয়ার চার থেকে পাঁচ দিন পর পোনা ছেড়ে দেওয়া যাবে। পুকুরের চারপাশ নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে, যাতে বর্ষার পানিতে মাছ ছড়িয়ে না যায়, কিংবা অন্য কোনো মাছ চাষকৃত পুকুরে ঢুকতে না পারে।

টেংরার প্রজননকাল

টেংরার প্রজননকাল এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত। প্রজনন মৌসুমের আগে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত আট থেকে ১০ গ্রাম ওজনের টেংরা সংগ্রহ করে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্রুড তৈরি করা হয়। প্রস্তুত করা পুকুরে ছেড়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই এসব কাজ সেরে নিতে হবে। প্রজননের জন্য পুকুরের পাশে সিস্টার্ন নেটের হাপা তৈরি করে নিতে হবে।

কৃত্রিম প্রজননের কৌশল

কৃত্রিম প্রজননের আগে কোনো খালবিল বা পুকুর থেকে পরিপক্ব পুরুষ ও স্ত্রী মাছ তুলে সিমেন্টের তৈরি সিস্টার্নে অথবা ফাইবার গ্লাস ট্যাঙ্কে প্রায় এক দিন রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ সময় মাছগুলোকে কোনো খাবার দেওয়া যাবে না। সিস্টার্নে অক্সিজেন নিশ্চিত করতে কৃত্রিম ঝরনা ব্যবহার করতে হবে। টেংরার স্ত্রী ও পুরুষÑউভয়কে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড (পিজি) অথবা ওভাটাইড বা ওভাপ্রিম হরমোন পাখনার নিচের অংশে ইনজেক্ট করতে হবে। এ ইনজেকশন দেওয়ার পর হাপায় ১:২ অনুপাতে স্ত্রী ও পুরুষ রাখতে হবে। প্রতিটি হাপায় দুই থেকে তিনটি করে স্ত্রী মাছ রাখা যেতে পারে। প্রজননকালে আশপাশের পরিবেশ কোলাহলমুক্ত রাখতে হবে। মাছে হরমোনের ইনজেকশন সন্ধ্যায় দেওয়াই শ্রেয়। হরমোন প্রয়োগ করার আট থেকে ৯ ঘণ্টা পর হাপাতেই স্ত্রী টেংরা ডিম ছাড়ে। ডিম আঠাল অবস্থায় হাপার চারপাশে লেগে যায়। ডিম দেওয়ার পর হাপা থেকে ব্রুডগুলো সরিয়ে নিতে হবে। ডিম ছাড়ার ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা পর ডিম ফুটে রেণু বের হয়। রেণুর ডিম্বথলি নিঃশেষিত হওয়ার পর রেণুকে খাবার দিতে হবে। হাপাতে রেণু পোনাকে এভাবে সপ্তাহব্যাপী রাখার পর চাষযোগ্য পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়।