মেহেরপুরে গাছে গাছে দোল খাচ্ছে সজনে ডাটা

159

কুমড়ো ফুলে ফুলে, নুয়ে পড়েছে লতাটা, সজনে ডাটায় ভরে গেছে গাছটা। আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি, খোকা কবে তুই আসবি ? কবে তোর ছুটি ? কবির কবিতার লাইন বর্তমানে গ্রাম বাংলার চিরায়ত রুপে মেহেরপুরে ফুটে উঠেছে। চৈত্র মাস এলেই ছেলেকে সজনের ডাটা খাওয়ানোর জন্য এখনও অনেক মা এভাবেই অপেক্ষা করে। মেহেরপুরের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এবং রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সজিনা গাছে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে সজনে ডাটা। প্রতিটি সজনে গাছের ডাল নুয়ে পড়ছে ডাটার ভারে। শীতের শেষে গরমে মেহেরপুরে এখনও মৌসুমী ও সুস্বাদু সবজি সজনের ডাটার জনপ্রিয়তা কমেনি। বহুগুণে গুণান্বিত সজনে ডাটা। মেহেরপুর জেলার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় সজনের গাছ আছে। বাজার দাম এবং চাহিদার কারণে অনেকে এখন সজনে ডাটা চাষ করছে। সবজি হিসেবে অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনের ডাটা চাষ অনেক লাভজনক। বাড়ির আনাচে-কানাছে বা পতিত জমিতে এ গাছ লাগিয়ে চাষ করা যায়।

এ মৌসুমে সবচেয়ে মূখরোচক, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তরকারি বলতে সজিনা ডাটা। বর্তমানে কাঁচা বাজার তালিকায় সজিনা ডাটা নেই এমন ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। এবার প্রতিটি গাছেই সজনের ডাটা দোল খাচ্ছে । সকলেই নিজের চাহিদা পূরণের পরও ডাটা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে।

ফুল থেকে লকলকে কচি ডাটা যখন বাজারে ওঠে ৬শ থেকে ৭শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে ডাটা যখন পরিপুর্ণ বাজারে আসে তখন দাম কমে যায়। বর্তমানে বাজারে এখন ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার ঝড়-ঝাপটা না হওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন এসছে প্রচুর। সজিনা উৎপাদনে চাষিদের কোন খরচ হয়না। ফলে গাছ থেকে যতটুকু সজিনা ডাটা উৎপাদন হয় তার সবটুকুই চাষির লাভ।

জেলায় কত হেক্টর জমিতে সজিনার গাছ আছে তার সঠিক হিসেব কৃষি বিভাগের নাই।

মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের সজনে চাষি মিন্টু মিয়া জানান- বাণিজ্যিকভাবে মাঠে কোন জমিতে সজনে চাষ করেন না। তার বাড়ির চারপাশে ১০টি সজনে গাছ লাগিয়েছেন। এ গাছ লাগাতে কোন খরচ হয়নি তার। তিনি প্রতি মৌসুমে ৬-৭ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করে থাকেন। এবার গাছে যে পরিমান ডাটা ধরেছে তাতে তিনি আশাবাদি ১০ হাজার টাকার ডাটা বিক্রি করবেন।

একই গ্রামের আর এক চাষি রফিকুল ইসলাম জানান- এখন সজিনা গাছে থোকায় থোকায় ডাটা ধরেছে। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও গাছ ডাটায় পরিপূর্ণ। তিনি মূলত নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণেই বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছেন। তবে যে পরিমানে সজিনা ডাটা ধরেছে তা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ৭-৮ হাজার টাকার ডাটা বিক্রি করবেন। তিনি আরও জানান- সজিনা চাষে কোন খরচ হয়না। গাছের ডাল লাগালেই হয়। ডাল লাগানোর পর কয়েকদিন গোড়ায় পানি দিলেই মাটিতে গাছ লেগে যায়। তবে সজিনার প্রধান শত্রু হচ্ছে ঝড়। ঝড়ে যদি ডাল ভেঙ্গে যায় এমনকি গাছ উপড়ে পড়ে।

সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান- আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সজিনার সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় সজিনা গাছ আছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শংকর কুমার মজুমদার জানান- দেশে সজনে সচারাচর দু’ধরনের হয়ে থাকে। মৌসুমী এবং বারমাসী। মেহেরপুরে আগে বারমাসী জাতের সজনে আবাদ কম হলে ও এখন বারমাসী সজিনার চাষ বেড়েছে।কৃষদের মাঝে সজিনা চারা বিতরণ করে সজিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।