বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনিয় জিনিসের দাম

150

গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বেড়ে তেল ও চিনির দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে। সেইসঙ্গে সবজি, মাছ-মাংস কিংবা মসলার দামও কমছে না। বিশেষত আদা ও জিরার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত সপ্তাহের চেয়েও বেড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের ৫৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ এ সপ্তাহে মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০, ৮৫ ও ৯০ টাকায়। ৩০ টাকা কেজি দরের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। ৩০০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা। চীন থেকে আমদানি করা ভালো মানের আদার দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়। অন্যদিকে এ সময়ের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। মসলার বাজারে কাঁচামরিচের দামও এখন আকাশছোঁয়া। বাজারে কাঁচামরিচের কেজি এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা। কয়েক দিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোয় প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ও চিনি ১৪০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখনও চিনির সংকট কাটেনি। অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি।

বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি বন্ধ ও নানা ধরনের সংকটের কথা বললেও ক্রেতারা তা মেনে নিতে নারাজ। ক্রেতারা বলছেন, মাছ-মাংস, মসলা ও শাকসবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমদানি বন্ধের অজুহাতে বাজার সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো সবজির দাম কমেনি, বরং এ বছর চড়া দামের সবজির তালিকায় যোগ হয়েছে সচরাচর স্থিতিশীল থাকা আলুও। এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি দামে আলু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

শুধু আলু নয়, বাজারে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পেঁপের দামও। সারাবছর এ সবজিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কেনা গেলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে অন্যান্য সবজির প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবজির দাম অনেকটা আকাশছোঁয়া। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বাজারে দাম বেড়ে প্রতি কেজি পটোল ৭০ টাকায়, মুলা ৬০ টাকায় আর গোল বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে সেঞ্চুরি পার করা সবজিগুলো হচ্ছে, কাঁকরোল, বরবটি ও কচুরমুখি।

গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির বাজারে দাম কমার তালিকায় আছে, প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়ার শসা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি কাঁচা আম ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি কেজি শসা ৪০ টাকা, লেবুর হালি ২০ টাকা। লাউ প্রতিটি ৬০-৮০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি। ধনিয়াপাতা ৪০০ টাকা কেজি। এ সপ্তাহে সবজির বাজারে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া সবজিগুলো হচ্ছে ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা ও চালকুমড়া।

আর প্রতি কেজি ৮০ টাকা মূল্যের সবজিগুলো হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটোল, উস্তা, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙে ও বেগুন। প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া সবজিগুলো হচ্ছে কাঁকরোল, বরবটি ও কচুরমুখি।

সবজির পাশাপাশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের বাজারও। হুট করে সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৬০০ টাকা কেজির কমে কেনা যাচ্ছে না টেংরা, কই, শিং ও চিংড়ি মাছ। চাষের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকার বেশি দামে। দুই কেজি বা তার চেয়ে বড় হলে দাম কেজিতে আরও ১০০-২০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এমনকি ছোট আকারের পাঙাশ-তেলাপিয়া মাছের দামও এখন কেজিপ্রতি ২৪০-২৫০ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ে ২০০ টাকা কেজি বা তারও কমে পাওয়া যেত।

এছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা ডজন। গরুর মাংসের দাম রমজানের পর থেকে দুই দফা বেড়ে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।