গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে খামারিরা

130

ঈশ্বরদীতে দফায় দফায় বেড়েই চলেছে গো-খাদ্যের দাম। খামারিদের এখন প্রতিদিন গো-খাদ্যে খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। গো-খাদ্য মিলার ও কোম্পানির মালিকদের দুষছেন খামারিরা। এক বছর আগের তুলনায় এবারে পশু পালনে যে পরিমাণে খরচ বেড়েছে, সে অনুযায়ী ন্যায্য মূল্যে দুধ ও গরু বিক্রি করতে না পেরে খামারিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। দফায় দফায় গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে কোরবানির পশুর দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

জাতীয় পদকপ্রাপ্ত তন্ময় ডেইরি ফার্মের মালিক আমিরুল ইসলাম জানান, দফায় দফায় গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি দুধের দাম। শ্রমিকের মজুরিও অনেক বেড়েছে। সমস্যার মধ্যেই এখনো টিকে আছি, কিন্তু কতদিন যে টিকতে পারব সেটাই এখন প্রশ্ন। অরণকোলার মুনতাহা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু প্রামাণিক জানান, গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিসহ শ্রমিকের মজুরি খরচ করে লাভবান হতে পারছেন না খামারিরা। বর্তমান বাজারে ভালো মানের ভুসি ২ হাজার ২০০ টাকা বস্তা। গত বছর দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। ৭০ কেজির খৈলের বস্তার দাম ছিল ২ হাজার ৮০০, এখন ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। গো-খাদ্যের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়েনি দুধ ও গরুর দাম। এভাবে চলতে থাকলে গরু পালন খুব কষ্টকর হবে বলে জানান।

খামারিরা গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা গমের ভুসির বর্তমান বাজারমূল্য ২ হাজার ২০০ টাকা; যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং দুই বছর আগে ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। ৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল এখন ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, গত বছর ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। ৫০ কেজির ধানের কুঁড়ার দাম ৯০০ টাকা, গত বছর ছিল ৭০০ টাকা। প্রতি কেজি খড় এখন ১৫ টাকা, আগে ছিল ১০ টাকা। এছাড়া খেসারি ও ছোলার ভুসির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। গত ১০ বছরে সাত-আট দফা গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। খামার শ্রমিকদের দুই বছর আগে বেতন ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এখন ১৫ হাজারের নিচে কোনো শ্রমিক কাজ করতে চায় না। পশু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ খামার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে খামারিরা খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না।

ফতেহ মোহাম্মদপুর এম এস কলোনির গরু খামারি সাবিনা খাতুন বলেন, প্রতি বছর নিজ বাড়িতে তিন-চারটি গরু পালন করি। গো-খাদ্যের দাম বেশি, তাই এখন লাভ হচ্ছে না। গো-খাদ্যের দাম ও লালনপালনের পরিশ্রমের মূল্য হিসাব করলে লাভ হয় না। তবুও বাড়ির কাজের পাশাপাশি গরু পালন করছি। এক ধরনের শখ ও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সারা বছর ভুসি-খৈল কিনে যে টাকা খরচ করি, বছর শেষে গরু বিক্রি করে সে টাকা একবারে পেলে অনেক উপকার হয়। কিন্তু এবারে লাভ তো দূরের কথা এনজিও এর সুদ দিয়ে পুঁজি ফেরত আসবে কি না সে আশঙ্কায় আছি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, যারা প্রকৃত খামারি তাদের গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উন্নতমানের ঘাসের আবাদ করতে হবে। এতে গো-খাদ্যের খরচ বেশ কমে যাবে। পাশাপাশি ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যেসব খামারি শুধু ভুসি, খৈল, খড়ের মতো গো-খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল তাদের গরু পালন করে এবারে লাভবান হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হবে।