ঘরে ঘরে গরুর খামার মেহেরপুরের গাংনীতে

198

মেহেরপুরের গাংনীর রাইপুর গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা লিলুফা খাতুন। পাঁচ বছর আগের কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে গৃহবধূ নিলুফার। অভাব যেন হাঁ করে গিলে খেতে এসেছিল। আত্মীয়স্বজন কেউ ছিল না তার পাশে। সংসারের খরচ আর সন্তানদের পড়ালেখা নিয়ে ছিলেন বেশ চিন্তিত। আজ আর সে অবস্থা নেই নিলুফার। পশু পালন করে সংসারের ব্যয়ভার বহন ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে তা একটি ব্যাংকে সঞ্চয় করছেন তিনি। এখন তার গোয়াল ঘরে রয়েছে ৪টি গরু। এবার সবগুলোই তুলবেন কোরবানির হাটে। শুধু লিলুফা খাতুন নয়, তার মতো অসহায় ও বিত্তশালী গৃহবধূসহ সবাই গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। চাকরির প্রত্যাশা না করে অনেক শিক্ষিত যুবক নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার।

গাংনী শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাইপুর গ্রাম। গ্রামের আয়তন খুব বেশি নয়। মাত্র ৩৮০টি পরিবারের বাস। প্রতিটি পরিবারের গোয়ালে রয়েছে বিভিন্ন আকারের গরু। কোরবানির সময় এলেই এ গ্রামটিতে পালিত ষাঁড়ের বিষয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এলাকার মানুষের কাছে। এবার কোরবানিতে প্রায় ২০ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা করছেন গবাদিপশু পালনকারীরা। গ্রামটি কোরবানির পশুর গ্রামের খ্যাতি থেকে স্মার্ট লাইভ স্টক ভিলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। চলতি কোরবানির মৌসূমে গ্রামটিতে প্রায় ২০ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা করছেন খামারিরা।

গ্রামের ফুরাদ হোসেন জানান, তার খামারে ছোট বড় ৬০টি গরু আছে। এর মধ্যে ২০টি গরু এবার কোরবানির হাটে তুলবেন। এখন তার ব্যস্ত সময়। চলতি কোরবানির মৌসুমে অন্তত ২৫ লাখ টাকার গরু বিক্রি করবেন তিনি। পশুপালনকারী আলামীন জানান, তার বাড়িতে রয়েছে ৫টি এঁড়ে গরু। ২৫ হাজার টাকা করে গরু কিনে এনেছিলেন। এখন একেকটি গরুর দাম অন্তত দেড় লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ব্যাপারীরা আসছেন ও দাম বলছেন।

ঠিকাদার ও পশুপালনকারী মকলেচুর রহমান জানান, এক সময় গ্রামের লোকজন গরুর ব্যবসা করত। পরে পশুপালন লাভজনক হওয়ায় গ্রামের লোকজন পশু পালন শুরু করেন। গরুর পাশাপাশি রয়েছে ছাগলের খামার। গবাদি পশু পালনের অব্যাহত ধারা ধরে রাখতে আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ঘাস। ঘাস আবাদ করে বিক্রি করার বিষয়টি আত্মপ্রকাশ করেছে আরেকটি লাভজনক খাত হিসেবে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে সহজে পাওয়া ধান, গম, ভুট্টা, ডালসহ পুষ্টিকর খাদ্য তৈরি করছেন খামারিরা নিজেই।

গাংনী উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন আরিফুল ইসলাম জানান, কোরবানির ষাঁড়ের গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রাইপুর গ্রামকে স্মার্ট লাইভ স্টক ভিলেজে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর। যার মাধ্যমে অন্য গ্রামের মানুষ গবাদি পশু পালনে আরও উদ্বুদ্ধ হবে বলে আশা করছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।