বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক কাজী এবাদুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২২ সালের ১৪ জুলাই ৮৬বছর বয়সে তিনি মারা যান। তিনি একাধারে স্বনামধন্য লেখক ও আইন বিশ্লেষক ছিলেন।
উল্লেখ্য, কাজী এবাদুল হক ১৯৩৬ সালের ১লা জানুয়ারি ফেনীর বালিগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফেনী শহরে ভাষা আন্দোলনকে সংগঠিত করতে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ১৯৫৪ সালে ফেনী ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করে ফেনী জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবাদুল হক। ১৯৬৬ সালে তিনি তৎকালীন ঢাকা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
১৯৯০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে যোগ দেন তিনি। উক্ত সময়েই কাজী এবাদুল হক নজির সৃষ্টিকারী ঐতিহাসিক বাংলা ভাষায় রায় দেন। ২০০০ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হন, ২০০১ সালে অবসর যান। সাবেক এই বিচারপতি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘বিচার ব্যবস্থার বিবর্তন’ (১৯৯৮); ‘ভূমি আইন ও ভূমি ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ’ (২০০০); ‘নজির আইন সংহিতা’ (২০১১ প্রথম খণ্ড); ‘নজির আইন সংহিতা’ (২০১৩, দ্বিতীয় খণ্ড); ‘এ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব জাস্টিস ইন বাংলাদেশ (২০০৩); ‘ফেলে আসা সেইসব দিনের কথা (২০১০); ‘উচ্চ আদালতে বাংলা চর্চা ও বাংলায় রায়’ (২০১৪)। এছাড়া বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সঙ্গে যৌথভাবে একটি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি- ‘ইমপর্ট্যান্ট ডিসিশন্স অব দি সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ’ (২০১৯)। এ গ্রন্থগুলো তাঁর অতুলনীয় কীর্তি। এসব গ্রন্থে আইন বিষয়ে বহুমাত্রিক আলোচনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য তিনি সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন। বাংলা ভাষায় আইনচর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এ গ্রন্থগুলো অপরিসীম ভূমিকা রাখছে।
বিচারপতি কাজী এবাদুল হকের স্ত্রী ড. শরিফা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক। তিনিও ২০১৭ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। তাঁর চার কন্যা হলেন- প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম-এর উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী শামীম সুলতানা, ড. কাজী সাবেরা সুলতানা, ড. কাজী ইফফাত হক ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক।