প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ না করে প্লাস্টিকের ট্রে-তে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। এতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর উপযোগী হবে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করে সামান্য জৈব সারের ব্যবহারে খরচ কমে যাচ্ছে। প্লাস্টিকের ট্রে-তে বীজতলা করায় ধানের চারা উত্তোলন, রোপণ, ফসল মাড়াই ও সবই একযোগে করা যাবে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ ব্যবহার করায় ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা সম্ভব। ধান চাষে কৃষকদের শ্রমিক সংকট নিরসন, সময় অপচয় রোধ ও অতিরিক্ত খরচ রোধে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার আওতায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় সারপুকুর ইউনিয়নের সরল খাঁ গ্রামে ‘সমলয়’ চাষ পদ্ধতিতে বীজতলা ও ধানের চারা রোপণে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে কৃষিতে খুলছে এক
নতুন দুয়ার। গত ১০ জুলাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এ পদ্ধতিতে চাষের উদ্বোধন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, এ চাষ পদ্ধতির আওতায় জেলার আদিতমারী উপজেলার ৬০ জন কৃষককে বেছে নেয়া হয়েছে। তাদের ৫০ একর জমিতে রোপা আমন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হবে। এ চাষাবাদ নিয়ে কৃষক ও কৃষি বিভাগ নবদিগন্তের কথা বলছে। তারা বলছে, সমবায়ভিত্তিক এ চাষাবাদে নতুন পালক যোগ হতে পারে কৃষিতে। তবে, মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬০ জন কৃষকের মধ্যে কোনো সমিতি বা একত্রীকরণ করা হয়নি। শুধু নাম লিখে ৬০ জন কৃষককে এ চাষের আওতায় আনা হয়েছে। এ চাষাবাদকে যদি স্থায়ী সমিতি বা সাংগঠনিক রুপ দেয়া যায়, তবেই দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সুফল মিলবে বলে মত দিচ্ছেন কৃষি-সংশ্লিষ্টরা।
কৃষক শশী কান্ত, দুলাল মিয়া। একজনের ৬ বিঘা, একজনের ১৩ বিঘা জমি এই চাষের আওতায় পড়েছে। তারা বলছেন, ধানের যে বীজ কৃষি বিভাগ হিসাব করে দিয়েছিল, সেই বীজের অনেকটাই বেঁচে যাবে। মেশিনে রোপণ করার কারণে দুদিনেই প্রায় ২৫ বিঘার চারা রোপণ শেষ। কাটাও হবে দ্রুত। এতে সব খরচ বহন করছে কৃষি বিভাগ। বিঘা প্রতি ধানের ফলন বাড়বে ৩ থেকে চার মণ। সেবা-ভর্তুকির মূল্য ধরলে বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকার বেশি সুবিধা পাবে কৃষক। তাদের এলাকায় যার ১০-১২ শতাংশ জমিও এ চাষের আওতায় পড়েছে। তারা আরও বলেন, তারা শুধু জমি তৈরি করে দিয়েছেন। সার, পানি, কীট ও বালাইনাশকসহ সব খরচ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ছোট-বড় সব কৃষক একসঙ্গে ধান রোপণ ও ফসল তোলার প্রতিশ্রুতিতে ভিন্ন মাত্রারূপে অনুভব করছে।
কৃষি বিভাগের মতে, সারপুকুর ইউনিয়নের সরল খাঁ গ্রামের ৬০ জন কৃষকের ৬০.৭২ হেক্টর জমি সমলয় চাষাবাদ আওতায় আনা হয়েছে। যার মধ্যে রোপা আমন ৫০ একর। এ ৫০ একরে কৃষি বিভাগের ব্রিধান-৯৩ এর চারা রিপার মেশিন দিয়ে লাগানো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে মিটিং করেছি। এতে কৃষক এবং আর সবার সঙ্গে কথা বলে যখন সরল খাঁর কৃষকরা রাজি হয়েছে। তখন সেখানেই এ চাষাবাদ শুরু করা হলো। এতে আমাদের শ্রমিক সংকট কেটে যাবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক (পিপি) আলী নূর বলেন, এই চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষকের যে শ্রম ও শ্রমিক খরচ, তা কমে যাবে। পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে তারা চাষাবাদ করবেন। ধান কাটার সময় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ব্যবহারের দ্রুত কাটা ও মাড়াই করতে পারবেন। লালমনিরহাট জেলাতে শুধু আদিতমারী উপজেলাতেই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিতে এ আধুনিকতা যুক্ত করেছে। বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে। আগামীতে এসব উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকাতেই ভোট দিতে হবে। তাছাড়া এসব সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।