কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী মীরসরাইয়ের কৃষক কাশেম

127

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী কৃষক আবুল কাশেম (৬৬)। কেঁচো সার উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন মাশরুম, পানের বরজ, শাকসবজির বাগান, নার্সারি, মাছ চাষ ও গরুর খামারসহ সমন্বিত কৃষি খামার।

কেঁচো সার, মাশরুমসহ খামারে উৎপাদিত শাকসবজি, মাছ ও গরুর দুধ বিক্রি করে প্রবাস ফেরত আবুল কাশেম এখন মাসে আয় করেন প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

সম্প্রতি মীরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের কদমতলা এলাকায় পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের কৃষক আবুল কাশেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে দোচালা টিনের ঘর। ঘরের নিচে সিমেন্টের তৈরি ৩৪টি রিং সø্যাব। এ সময় কথা হয় বৃদ্ধ আবুল কাশেমের সঙ্গে এসব রিং সø্যাবে দুই বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন তিনি। রিং সø্যাবে গোবর, মুরগির বিষ্ঠা ও কলাগাছ টুকরা টুকরা করে কেটে মিশ্রণ করা হয়। সব রিং সø্যাবে ছেড়ে দেয়া হয় কেঁচো। তারপর চটের বস্তা দিয়ে রিং সø্যাব ঢেকে রাখা হয়।

জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে পাওয়া ছয়টি রিং এবং বাকি রিংগুলো নির্জ খরচে ও তিন হাজার কেঁচো দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করেন। প্রথমে রিং ও ঘর নির্মাণসহ মোট খরচ হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এক মাসে উৎপাদন হয় ১০ মণ কেঁচো সার। প্রতি কেজি সার ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি প্রতি কেজি কেঁচো এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া মাশরুম, নার্সারির চারা, মাছ ও গরুর দুধ বিক্রি করে উদ্যোক্তা আবুল কাশেমের এখন মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা। আয়ের অর্থ দিয়ে ছেলেকে বিদেশেও পাঠিয়েছেন তিনি।

এদিকে আবুল কাশেমের উৎপাদিত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। করেরহাট ইউনিয়নের বিশ্বটিলা এলাকার কৃষক শিপন মিয়া জানান, আবুল কাশেমের কেঁচো সার ফসলে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছি। পাশাপাশি তার সমন্বিত কৃষি খামার আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ছে, তাতে ধানের চাষ করে লাভ হয় না। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। উৎপাদিত জৈব সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে বিক্রি করছি।

এছাড়া পিচ হিসেবে অথবা কেজি দরে কেঁচো কিনতে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আসেন। পাশাপাশি মাশরুম উৎপাদন করে খরচের তুলনায় অর্ধেক লাভ করছি। সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করছি শুধু পরিশ্রমের মাধ্যমে।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসল উৎপাদনে খুবই উপযোগী একটি সার। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা কৃষক পর্যায়ে এ সারের ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছি। সেই সঙ্গে এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় উৎকৃষ্ট মানের ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রস্তুতে খামারিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে আসছি। স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম এরই মধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট সার, মাশরুম উৎপাদন ও সমন্বিত কৃষি খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে যারা বেকার ও হতাশ যুবকদের জন্য প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্বাবলম্বী প্রবীণ কৃষক আবুল কাশেম।