শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা নেই আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

164

শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ পার হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। খরায় আমনের ক্ষেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়েছে। ভরা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা না পেয়ে অনেক কৃষকই সেচ দিয়ে আমন আবাদ শুরু করেছে। বাকিদের এখনও তেমন প্রস্তুতির দেখা মিলছে না। বীজতলা প্রস্তুত করলেও তা নষ্ট হচ্ছে পানির অভাবে। সেচই একমাত্র ভরসা। সেচের বাড়তি খরচে বাড়বে উৎপাদন খরচ। এ অবস্থায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চাষিদের। কৃষি বিভাগ বলছে, সহসা বৃষ্টি না হলে কৃষককে সেচের পানি দিয়েই আমন আবাদ শুরু করতে হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট, বরুনাগাঁও ও রানিশংকৈল, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি, পীরগঞ্জ, হরিপুর উপজেলাসহ রুহিয়া থানার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় আমনের চারা ওঠানো ও রোপণ করার দৃশ্য দল বেঁধে শ্রমিকেরা কোথাও আমনের চারা তুলছেন, আবার কোথাও চারা রোপণ করছেন। তাদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের চারা তুলে রোপণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে বেশ কয়েক জায়গায়। জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি জাতের ধান আবাদ করা হবে বলে জানান কৃষকেরা। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে উঁচু জমিতে লাগানো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এতে করে বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন এ জেলার কৃষকেরা।

সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক খাদেমুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর (২৫০ শতক) জমিতে আমন ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড রোদে আর বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। কারণ বৃষ্টির পানি না হওয়ায় আমনের জমিগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তিনিও দুশ্চিন্তা করছেন।

সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক জমসেদ আলী জানান, তিনি এ বছর দুই একর (২০০ শতক) জমিতে আমন ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড রোদে আর বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। বৃষ্টির পানি না হওয়ায় আমনের জমিগুলো বরেন্দ্র অঞ্চলের গভীর নলকূপের সাহায্যে পানি দিয়ে চারা রোপণ শুরু করছেন কৃষক।

একই গ্রামের কৃষক আমীরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম আলী জানান, জমিগুলোয় বিএমডিএ’র সেচ সুবিধা নেই। যদি বিএডিএ’র সেচ সুবিধা থাকত তাহলে স্বল্প খরচে আমন, বোরোসহ বিভিন্ন ফসল আবাদে সুবিধা পেতাম। তার জন্য বিএমডিএ এর গভীর নলকূপগুলোর পাইপলাইন বৃদ্ধি,আধুনিকায়ন ও জনবল বাড়ানোর দরকার।

ঠাকুরগাঁও বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলায় বিএমডিএর আওতায় এক হাজার ৪০০-এর বেশি গভীর নলকূপ ও সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাতকোয়া রয়েছে। যার মাধ্যমে কৃষক স্বল্প খরচে বোরো ও আমন মৌসুমে বিভিন্ন ক্ষেতে পানি দিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও বিএমডিএ’র প্রকল্প পরিচালক রেজা মুহাম্মদ নুরে আলম জানান, জেলায় কৃষির উন্নয়নে জলাবদ্ধতা নিরসন, সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাতকোয়াসহ বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। যেসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে তার মাধ্যমে কৃষক উপকৃত হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাসেল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় এ বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর, যাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চার লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন, যা গত বছরে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, বৃষ্টির পানির অভাবে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে উঁচু জমিগুলোয় পানি থাকছে না। তবে বৃষ্টির পানি না হওয়া পর্যন্ত সম্পূরক সেচ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ ও সেচ পাম্পগুলোও সচল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে এবং কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে তিনি আশা করেন।