গভীর সমুদ্রে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। ট্রলার বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। তবে গভীর সমুদ্রের জেলেরা ইলিশের দেখা পেলেও উপকূল এলাকায় তেমন ইলিশ মিলছে না। মৎস্য বিভাগ বলছে, আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ চ্যানেলসংলগ্ন বেশ কয়েকটি ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ার কারণে ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে, তাই উপকূল এলাকায় তেমন ইলিশ মিলছে না। এক মাস আগে দীর্ঘ ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে সাত দিনের মধ্যে দুবার বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে ইলিশ সংকটে নাকাল ছিল জেলেরা। তবে এবার ইলিশের দেখা পেয়ে তারা সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।
গতকাল শুক্রবার পটুয়াখালীর বড় দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর ও মহিপুর সকালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন আড়তগুলোয় স্থানীয়রা ছাড়াও চট্টগ্রাম, ভোলা, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার, হাতিয়া, পাথরঘাটাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে ট্রলার নিয়ে মাছ বিক্রি করতে এসেছেন। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ায় সরগরম পুরো মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। বিভিন্ন সাইজের ইলিশের ক্রয়-বিক্রয় এবং হাঁক-ডাকে পুরো বাজার ছেয়ে গেছে।
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ বিক্রি করতে আসা এফবি মারুফ ট্রলারের মাঝি বেল্লাল হোসেন বলেন, ১০ দিন আগে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। প্রথম চার দিন জাল টেনে কোনো মাছ পাইনি। পরে অল্প অল্প মাছ পেতে থাকি। গতকাল পর্যন্ত মোটামুটি ভালো মাছ পেয়েছি, যা গত এক বছরেও পাইনি। আজ মাছ নিয়ে আলিপুর মৎস্য বন্দরে বিক্রি করতে এসেছি। যা মাছ পেয়েছি তার দাম ১০ লাখ টাকার ওপরে হবে।
তিনি আরও বলেন, গত দুই মাসে তিনবার সাগরে গিয়ে ১৫ লাখ টাকা লোকসানে পড়েছি। এর মধ্যে আবহাওয়া খারাপ থাকায় কয়েকবার তীরে ফিরতে হয়েছে। ১০ দিন আগে চরফ্যাশন থেকে মাছ শিকারে নেমে আজ মাছ বিক্রি করতে এখানে এসেছি। আবার এখান থেকে ১৫ দিনের বাজার নিয়ে সাগরে যাব। মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করব। এভাবে যদি মাছ আবার পাই তাহলে ঋণ পরিশোধ করে সংসারে খরচ করতে পারব।
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মোল্লা ফিসের পরিচালক এজাজ মোল্লা বলেন, গভীর সমুদ্রের জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে আসছেন এবং ভালো দামও পাচ্ছেন। আজ জাটকার মণ ২১ হাজার টাকা, ৬০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ২৮ হাজার, ৮০০-৯০০ গ্রামের ইলিশ ৩৬ হাজার এবং এক কেজির ওপরের ইলিশ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এই দামে জেলেরা খুশি থাকলেও পাইকারি ক্রেতারা প্রায়ই লোকসান গুনছেন।
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ফাহাদ ফিসের পরিচালক ফাহাদ হোসেন বলেন, গভীর সমুদ্রের জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে আসছেন এবং ভালো দামও পাচ্ছেন। আজকের ছোট সাইজের প্রতি মণ ২১ হাজার টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ ২৮ হাজার, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৩৬ হাজার এবং এক কেজির ওপরের ইলিশ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এই দামে জেলেরা খুশি থাকলেও পাইকারি ক্রেতারা প্রায়ই লোকসান গুনছেন।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, কয়েক দিন যাবৎ গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারকারী ট্রলারগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে ফিরছে। তবে কাক্সিক্ষত ইলিশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপকূলবর্তী জেলেরা। এর প্রধান কারণ হলো আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ চ্যানেলসংলগ্ন বেশ কয়েকটি ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এখন ৬৫ দিনের অবরোধের সুফল পাচ্ছেন জেলেরা। তাই উপকূলের জেলেদের জন্য পরামর্শ থাকবেÑতারা যেন গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের সরঞ্জাম তৈরি করেন।