পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েও মাথায় হাত কৃষকের

165

পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের পর শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে বেড়েছে কৃষি পণ্য উৎপাদন। জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট উৎপাদন হয়েছে। এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের দাম মণ প্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কম। একদিকে সার, বীজ, শ্রমিকসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে।

সম্প্রতি জেলার সদর উপজেলার আংগারিয়া, জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট, নড়িয়ার ডগ্রী বাজার, গোসাইরহাট, সখিপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে কৃষকরা বিক্রির জন্য পাট নিয়ে আসলেও বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কৃষকরা পাট চাষ করেছেন ৩০ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দেশীয় জাতের পাট চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর, তোষা জাতের ২১ হাজার ৮০০ হেক্টর, কেনাফ জাতের ৩ হাজার ৯৮০ হেক্টর এবং মেশতা জাতের ১ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে।

জেলার সদর উপজেলার আংগারিয়া, জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট, নড়িয়ার ডগ্রী বাজার, গোসাইরহাট, সখিপুরসহ বিভিন্ন বাজারে ভোর রাত থেকে শুরু হয় পাট বিক্রি। ভোর থেকে কৃষকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ভ্যান, ট্রাকযোগে বাজারে পাট নিয়ে আসেন। বাজারে বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম দেখা যায়। কৃষকরা পাট নিয়ে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন।

আগারিয়া হাটে পাট বিক্রি করতে আসা কৃষক লুৎফর রহমান ঢালীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, প্রতি মণ পাট চাষ করে বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু বাজারে পাটের মূ্ল্য ১ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। এত কষ্ট করে পাট চাষ করলাম, কিন্তু এখন ন্যায্য দাম পেলাম না।

কাজীর হাটে পাট বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক সালাউদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, গত বছর পাটের দাম ভালোই ছিল। এবছর কৃষকের মূলধন ফিরে পাওয়া কষ্টকর। বাজারে এখন প্রতি মণ পাটের মূল্য সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা প্রতি মণ পাট বিক্রি করতে পারলে লাভবান হতে পারতাম। এখন মূলধন নিয়ে বাজার থেকে ফিরতে পারলেই খুশি হব।

হেলাল উদ্দিন সরদার গোসাইরহাটের চাপকাঠি গ্রামের কৃষক। ১৬ শতাংশ জমিতে তোষা জাতের পাট চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। ১৬ শতাংশ জমিতে তার পাট হয়েছে আড়াই মণ, যা তিনি ৪ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। হেলাল উদ্দিন সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর পাট ন্যায্য মূল্য পেয়েছিল কৃষকরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তাদের থেকে তোষা পাটের বীজ নিয়ে চাষ করেছিলাম। আমার সাড়ে চার মাস পরিশ্রম বৃথা হয়ে গেছে। ন্যায্য মূল্য পেলে লাভবান হতে পারতাম। সরকার যদি পাটের মূল্য নির্ধারণ করে দিত তাহলে ভালো হতো।

কাজিরহাট বাজারে পাইকারি পাট ক্রয় করেন হাজী দেলোয়ার মাদবর। তিনি  বলেন, পাটের বর্তমান যে দাম তা দিয়ে কৃষক, পাইকার কেউ লাভবান হয় না। গুদাম ভর্তি করে পাট রেখে দিয়েছি। মোকামে চাহিদা একেবারেই নেই। অথচ গত বছর এই সময় আমার গুদাম ঘরে কোনো পাটই ছিল না। মোকামে চাহিদা কম হওয়ায় পাইকাররাও কিনতে চায় না।

সখিপুরের মোল্লারহাট বাজারের পাইকার আশরাফ উদ্দিন বলেন, এবছর পাটের দাম তুলনামূলক কম। এখন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় প্রতি মণ পাট কিনতে পারি। সামনের দিনে এই দাম আরও কমবে। কৃষক, পাইকার সবাই লোকসানে রয়েছে এবছর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। এ বছর তোষা জাতের পাট বেশি চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা পাটের ন্যায্যমূল্য পেয়েছে। কৃষকদের কাছে এখনও পাট মজুদ রয়েছে। পাটের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষকরা লোকসান গুণছেন। আশা করছি শিগগিরই পাটের ন্যায্য দাম পাবেন কৃষকরা।