ঝালকাঠির ভেটেরিনারি হাসপাতালে  ভ্যাকসিন সংকট, দিশেহারা খামারিরা

142

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্ষুদ্র, মাঝারি, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ১০ হাজারেরও বেশি খামারি।

তাদের মধ্যে বেশি সংখ্যক লোকের আয়ের একমাত্র মাধ্যম পোলট্রি ফার্ম, পারিবারিকভাবে হাঁস-মুরগি পালন ও ডিম বিক্রি। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসে ভ্যাকসিন না পেয়ে হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে এসব সাধারণ মানুষকে। তাদের অভিযোগ, যখনই ভ্যাকসিন নিতে আসি, তখনই হাসপাতালের মূল ফটকে লেখা দেখি ভ্যাকসিন নেই।

উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ২ লাখ মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে বড় একটি অংশ এ পেশার সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন গবাদি পশু হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ভেড়া, মহিষ, কবুতর, কোয়েলসহ গৃহপালিত পশুপাখি বিভিন্ন রোগবালাইতে আক্রান্ত হয়ে মারা পড়ছে। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য সরকারিভাবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। তাই সাধারণ খামারিরা সরকারি ভ্যাকসিন না পেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে হাঁস-মুরগি পালনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

শিতালপাড়া গ্রামের ফোরকান হোসেনের দাবি, হাসপাতালে গিয়ে ভ্যাকসিন পান না। কিছু অসাধু লোক গোপনে বেশি দামে ভ্যাকসিন বিক্রি করে দেয়। মনি বেগম কুশঙ্গল ইউনিয়নের ডহরা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দুটি খামার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার দুটি খামারে শতাধিক ছোট-বড় হাঁস ও মুরগি ছিল। সময়মতো ভ্যাকসিন দিতে না পারায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০টি মুরগি মারা গেছে। তিন মাস ঘুরে সেপ্টেম্বর মাসে তিনটি ভ্যাকসিন পেয়েছি।’

মোল্লারহাট এলাকার জামাল হোসেন বলেন, ‘আমি ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মুরগির ভ্যাকসিন নিতে এসে জানতে পারি ভ্যাকসিন নেই। শুনছি, মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখ একবার খুবই কম পরিমাণ ভ্যাকসিন আসে। তা আবার দুই-তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।’

প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী তারা বরাদ্দ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে কলেরা ভ্যাকসিন ও বিসিআরডিভি ভ্যাকসিন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। সেপ্টেম্বর মাসে বিসিআরডিভি ৫০ হাজার চাহিদার বিপরীতে ২৫ হাজার, বাচ্চা মুরগির টিকা আরডিভি ৫০ হাজার চেয়ে ৫০ হাজার ও হাঁসের ডাকপ্লেগ ভ্যাকসিনের চাহিদার ৮০ পার্সেন্ট পাওয়ার কথা বললেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে এ হাসপাতালে হাঁস-মুরগিসহ সব ধরনের ভ্যাকসিনের সংকট রয়েছে।

অফিসের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, এ উপজেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত খামারির রয়েছে ২৫২টি। এর মধ্যে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী কাগজে-কলমে মুরগি ৯ লাখ ৯০ হাজার ৪৯০, হাঁস ২ লাখ ৭ হাজার ৫০টি ও কবুতর ৪৫ হাজার ৯৭০টি। এদিকে মাঠ পর্যায়ের এর চিত্র ভিন্ন। সঠিক জরিপের তালিকা নেই প্রাণিসম্পদ দপ্তরে। সঠিক গণনায় এর দ্বিগুণ হবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় খামারিদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। এ সংকট দ্রুত কেটে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের অন্যান্য রোগের ওষুধ ও টিকা কার্যক্রমে সংকট নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যাকসিন সংকটের বিষয়টি আমি জানতে পেরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ সংকট কেটে যাবে।’