৭০ টাকার কমে মিলছে না সবজি

135

বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করলেও সপ্তাহের ব্যবধানে আরেক দফা বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বেশিরভাগ সবজিতে। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে অনেক আগেই চলে গেছে মাছ-মাংসের দাম। বেঁচে থাকার জন্য সবজি আর ডিমের ওপর রেখেছিলেন ভরসা। কিন্তু বর্তমানে এ দুটো পণ্যের দামও অনেক বেড়েছে। কোনো সবজিই মিলছে না ৭০ টাকার কমে। ফলে বাজারে এসে বিপাকে পড়ছে ক্রেতারা। গতকাল রোববার রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার, সাগরপাড়া, নিউমার্কেট ও শালবাগানসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজির অভাব নেই। কিন্তু পেঁপে আর মিষ্টিকুমড়া বাদে বাজারে কোনো সবজি নেই, যেটার দাম ৭০ টাকার নিচে। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচাবাজারের প্রত্যেক পণ্যের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম বাড়ার স্পষ্ট কারণ জানা নেই। অধিকাংশ সবজির দামই গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। সবজির বড় বড় বাজারে কোনো সরকারি মনিটরিং নেই। যে যেমন পারছেন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। পাইকারিতেই যদি বাড়তি দাম কিনতে হয়, তাহলে তো লোকসান করে খুচরায় সবজি বিক্রি করা যায় না বলে জানান তারা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। একইভাবে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে, আদা ২০০ টাকা। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। গত সপ্তাহের চেয়ে পাঁচ-দশ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। করলা ৮০ টাকা, কচু ৭০ টাকা, লাউ ৬৫ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৬৫ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৭৫ টাকা, শসা ৮০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, সজনে ৭০ টাকা এবং বেগুন ও ফুলকপি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাহেব বাজারের বিক্রেতা সাদিকুল ইসলাম বলেন, সরবরাহ কম হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বেশি দামে কিনতে হয় বলে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সুজন বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

বাজার করতে আসা সালাম নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি বেসরকারি চাকরি করেন। শুক্রবার ছাড়া বাজার করার সময় থাকে না। মাস শেষে যা বেতন পাই, তা দিয়ে সন্তানদের নিয়মিত মাছ-গোশত খাওয়ান। প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে সবজির সঙ্গে ডিম খাওয়ান। কিন্তু এখন এই দুটো পণ্যও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানান এই ক্রেতা।

আশরাফ আলী নামের এক ক্রেতা বলেন, আমরা তো জিম্মি হয়ে গেছি। যে যেভাবে পাচ্ছেন পণ্যের দাম বৃদ্ধি করছেন। যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই হু-হু করে দাম বাড়ছে সাধারণ পণ্যের। সামর্থ্যরে মধ্যে রয়েছে কেবল কিছু শাক ও পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া আর মরিচ। লাউয়ের দামও বাড়তি। আলুও ৫৫ টাকা। বাকি সবই ৭০ থেকে ৮০ টাকার ওপরে। ২০০ টাকার সবজি কিনলে দুই দিন যায় না, ফিরতে হয় ফের সবজির বাজারে।

সবজি বিক্রেতা নূর হোসেন বলেন, সবজির বাজারে কোনো সরকারি মনিটরিং নেই। যে যেমন পারছেন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আমরা খুচরা বেচি। পাইকারিতেই যদি বাড়তি দাম কিনতে হয় তাহলে তো লোকসান করে খুচরায় সবজি বিক্রি করা যায় না।

তবে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। প্রতিকেজি পাঙাশ ২৫০-৩০০ টাকায়, রুই ৩৫০-৪০০ টাকায়, কাতল ৪০০ টাকায়, সিলভার কার্প ২৫০ টাকায়, কই ৫৫০ টাকায়, বড় তেলাপিয়া ৩০০ টাকায়, ইলিশ ৫০০-১৬০০ টাকায়, বাগদা চিংড়ি ৯০০ টাকায়, গলদা চিংড়ি এক হাজার ২০০ টাকায়, বোয়াল ৭৫০ টাকায়, টেংরা ৬০০ টাকায়, পাবদা ৬০০ টাকায় ও শিং ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ সপ্তাহে ২০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৪৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাতিহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়। এ সপ্তাহে মুরগির লাল ডিম ৫২ টাকা হালি ও সাদা ডিম ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায় ও খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকায়।

জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আফ্রিন হোসেন বলেন, সবজি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। মূলত সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমরা মনিটরিং করছি। আশা করছি সব কিছুর দাম স্বাভাবিক হবে।