পদ্মার চরে স্বপ্ন বুনছেন পেঁয়াজচাষিরা

101

রাজশাহীর বাঘায় কমেছে পদ্মার পানি। জেগে উঠছে চর। জেগে ওঠা পদ্মার চরের জমি প্রস্তুতিতে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই চর নিয়ে তাদের মনে রঙিন স্বপ্ন। পেঁয়াজ চাষের জন্য সেখানে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। চরাঞ্চলের আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এবং রোগবালাইও কম হওয়ায় হতে পারে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন। তাই তো উর্বর এই পলিমাটিতে পেঁয়াজ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা।

উপজেলার দুর্গম পদ্মারচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কৃষক পদ্মার বুকে জেগে উঠা চরে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। উর্বর মাটিতে ফসল ফলানোর চেষ্টা করছেন। কারও নিজ জমি, আবার কেউ খাজনা করে শীতকালীন ফসল বুনছেন জমিতে। কলাই, সরষে, মুগ, ফুলকপি, পালংশাক, লালশাক, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ক্ষীরা, ধনে পাতাসহ নানারকম ফসল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে চরের জমিতে।

কৃষকেরা জানান, কৃষিকাজ, পশুপালন আর মাছ ধরাই চরের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস। চরের জমিতে পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এরপরই আসে ধানের আবাদ। পানি-সহনশীল ধানে বর্ষা মৌসুমে চরের জমি ঢাকা পড়ে যায়। এছাড়া শীতকালের প্রথম দিকে নানা ধরনের সবজি চাষ করেন এখানকার মানুষেরা। মূল জমি ছাড়াও বাড়ির আঙিনায় নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়। তবে কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ চাষ খুব ভালো হচ্ছে। দাম ভালো পাওয়ায় এই কাজে মনোযোগ বেশিরভাগ কৃষকের।

কথা হয় উপজেলার পেঁয়াজচাষি আবদুস সালামের সঙ্গে। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে পদ্মার পানি আগে নেমে যাওয়ায় পেঁয়াজ আগাম রোপণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলন ও বাজারমূল্য ভালো পাবেন বলে আশা করছেন। গত বছর তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে বাজারমূল্য পেয়েছিলেন কেজিপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা। এবারও আশা করছেন আগের চেয়ে বেশি দাম পাবেন।

চকরাজাপুর চরের পেঁয়াজচাষি গোলাম মোস্তফা জানান, পদ্মার চরে তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে পদ্মার পানি আগে নেমে যাওয়ায় পেঁয়াজ আগাম রোপণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের বাজারমূল্য ভালো পাবেন বলে আশা করছেন। তবে অসময়ে পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে কিছু রোপণ করা পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্যে পানি নেমে যাওয়ায় রক্ষা পেয়েছি। তারপরও গত বছরের মতো দাম পেলে লাভ হবে। পদ্মার চরে এক বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন।

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৩০ হেক্টর জমিতে। আগাম পেঁয়াজ চাষিরা ভালো ফলন ও বেশি দাম পাবেন আশা করছেন। পদ্মার চরের পেঁয়াজের গুণগত মান ভালো হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, পদ্মার আশপাশের এলাকার চরাঞ্চলগুলোর মাটি উর্বর থাকায় বেশ ভালো ফসল ফলেছে। নানা জাতের শস্যের পাশাপাশি শাকসবজির চাষও হয় এ অঞ্চলে। এছাড়া এ বছর উপজেলায় সর্বত্রই কমবেশি পেঁয়াজেরও চাষ ভালো হয়েছে। উপজেলার সমতল এলাকার চেয়ে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়। তবে পেঁয়াজ চাষিসহ অন্যন্য সবজি চাষিদেরও সব সময় পরামর্শ দেয়া হয়।