হাত বদলেই ৩০ টাকার বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০

89

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ও টুপকারচর এলাকা থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে প্রায় ১৫০০ মণ বেগুন যাচ্ছে। ৩০ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাছে থেকে বেগুন কিনছেন পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। তবে এ বেগুন ২০ কিলোমিটার দূরে জেলা শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি।

উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের টুপকারচর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে টুপকার চর বাজারে পাইকারী ব্যবসায়ীরা টানা দুই মাস বেগুন কেনার জন্য বাজারের পাশে ঘর করেছেন। শ্যামপুর ও টুপকার চর এলাকার বেগুন চাষি কৃষকদের কাছ থেকে পাইকাররা বেগুন কিনে মহিষের গাড়ি দিয়ে এনে টুপকার চর বাজারে জমা করেন। আবার কয়েকজন কৃষক বেগুন অটোরিকশায় এনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। টুপকার চর বাজার থেকে ট্রাকে করে এ বেগুন ঢাকার বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। প্রতিদিন ছোট বড় প্রায় ১০টি ট্রাকে বেগুন যায়।

অন্যদিকে জেলা শহর ও জেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরাও বেগুন কিনে অটোরিকশায় করে শহরের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।

পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে আমরা বেগুন কিনছি ৩০ থেকে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। এই জায়গায় প্রায় ৫-৬ জন পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছে। আমরা এই জায়গা থেকে বেগুন কিনে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। কৃষকদের ক্ষেত থেকে বেগুন কিনে মহিষের গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে বেগুন ব্রহ্মপুত্র নদ পাড় করে জমা করি। পড়ে এই জায়গা থেকে ট্রাকে করে ঢাকায় বেগুন নিয়ে যাই। প্রতিদিন এই জায়গা থেকে প্রায় ১৫০০ মণ বেগুন ঢাকা নিয়ে যান পাইকাররা। প্রতিদিন ১০-১২ টা ট্রাক যা ঢাকায়।

বেগুন চাষি কৃষক সাইদুর ইসলাম বলেন, শ্যামপুর এলাকায় বেশির ভাগ মানুষ বেগুন চাষ করেন। আগে বেগুন মেলান্দহ বাজারে পাইকারি বিক্রি করতাম। গত কয়েক বছর ধরে টুপকার চর বাজার থেকেই পাইকারি বিক্রি করছি। ৩০ টাকা কেজি বেগুন বিক্রি করলাম। এখন যে দাম আছে এই দাম থাকলে কিছুটা লাভ হবে। দাম কমে গেলে লাভ হবে না। বেগুন চাষে খরচ বেড়েছে। সার-বিষ ও বীজের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

এদিকে জামালপুর শহরের বাজারে গিয়ে জানা যায়, বেগুন প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের পাইকারদের কাছ থেকে বেগুন কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা লাভ করছেন।

বাজারে সবজি কিনতে আসা শেখ ফরিদ বলেন, বেগুনের এখন যে দাম এই দামে বেগুন কিনা একটু কঠিন। এখন পুরোপুরি বেগুন চাষের সিজন। এই সময়ে বেগুন ৬৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত বছরের এই সময়ে বেগুনের দাম ছিল ৪৫-৪৫ টাকা।

মেলান্দহ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ৫০/৬০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, বেগুন ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে কৃষকরা তেমন লাভবান হবেন না। কারণ সার ও কীটনাশকসহ সব কিছুরই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বোতল বেগুন এইটাই চাষ বেশি হয়েছে। তাছাড়াও হাইব্রিড জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বেগুন চাষিদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।