জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে আলু চাষ। মাঠে মাঠে আলু রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা। তবে এই আলুর চাষ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। আলুর বীজ নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এ কারণে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বীজ আলু কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকদের অভিযোগ, কিছু অতিলোভী ব্যবসায়ীর কারসাজিতে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে বীজ আলু।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার হিচমী, কোমরগ্রাম, চৌমুহনী, ধারকী, পাকারমাথাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মাঠে মাঠে আলুর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে আলু রোপণের কাজ। তবে সংকটের অজুহাতে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ আলু কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা। একদিকে সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে বীজ কিনে শেষ অবধি যদি বাজারমূল্য ভালো না পাওয়া যায়, তবে সর্বস্বান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তাই স্বপ্নের সঙ্গে কিছুটা শঙ্কা নিয়েই এবার আলুর চাষ করছেন তারা।
জেলা কৃষি বিপণন অফিস সূত্র জানায়, এবার এ-গ্রেড কার্ডিনাল বীজ আলু ৪০ কেজি বস্তার দাম দুই হাজার ৪০০ ও বি-গ্রেড দুই হাজার ৩২০ টাকা, ডায়মন্ড এ-গ্রেড দুই হাজার ৪৮০ টাকা ও বি-গ্রেড দুই হাজার ৪০০ টাকা, এস্ট্রোরিজ এ-গ্রেড দুই হাজার ৬৮০ ও বি-গ্রেড দুই হাজার ৬০০ টাকা, গ্রানুলা এ গ্রেড দুই হাজার ২০০ ও বি-গ্রেড দুই হাজার ১২০ টাকা, কারেজ এ-গ্রেড দুই হাজার ৫২০ ও বি-গ্রেড দুই হাজার ৪৪০ টাকা। এছাড়া এ-গ্রেড ব্র্যাক লাল পাকরি দুই হাজার ৫২০ থেকে দুই হাজার ৬৮০ টাকা, ব্র্যাক চল্লিশা দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা এবং বারি আলু-৬২ দুই হাজার ৪৮০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব না মেনে সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ৪০ কেজি প্রতি বস্তা আলু বীজ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করছেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছে আলু বীজ বিক্রির পর কোনো সিøপ দিচ্ছেন না। আবার অনেকে সিøপে সরকারি দাম লিখে দিলেও দাম নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা।
সদর উপজেলার হিচমী বাজারের শাহীন আলী নামে এক কৃষক বলেন, গত বছর এক বিঘা আলু চাষ করেছি ১৭ হাজার টাকায়। কিন্তু এবার বীজের দাম বেশি হওয়ায় আমার তিন হাজার টাকা খরচ বেশি হয়েছে। হিচমী বাজারের একটি দোকান থেকে ব্র্যাক সিডের বীজ আলু তিন হাজার ২০০ টাকায় কিনেছি। তবে তার নির্ধারিত মূল্য প্রায় দুই হাজার ৭০০ টাকা।
গঙ্গাদাসপুরের আনিছুর নামে এক কৃষক বলেন, প্রতিবছর সার ও বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে একটি সিন্ডিকেট অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করে আসছে। চার দিন ঘুরে ঘুরে অবশেষে এক দোকান থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে দুই বস্তা বীজ আলু কিনেছি।
চক ফকিরপাড়া গ্রামের বাছেদ আলী বলেন, সরকার যে রেট দিয়েছে আলু বীজের জন্য সেই রেটে আমরা ডিলারের কাছে গিয়ে আলু পাচ্ছি না। দুই হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকার আলু তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা তো রাস্তা পাচ্ছি না কী করব।
মেসার্স লামিম ট্রেডার্সের আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ব্র্যাকের বীজ বিক্রি করি। তারা নির্ধারিত যে দাম আমাদের দিয়েছে, সেই দামেই বীজ বিক্রি করছি। কতিপয় কিছু অসৎ ব্যবসায়ী যাদের লাইসেন্স নেই, তারা সিন্ডিকেট করে বীজের দাম বেশি নিচ্ছেন। এতে আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আমরা কোনো দাম বেশি নিচ্ছি না।’
ক্ষেতলালের বটতলী বাজারের বিএডিসির অনুমোদিত বীজ ডিলার শাহিন বলেন, বাজারে বীজ আলুর কোনো সংকট নেই। আমরা সরকার-নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করছি। গ্রামগঞ্জে কোনো ছোট ছোট ডিলার বেশি দাম নিয়ে থাকলে বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, আলুর বীজের বিষয়টি নিয়ে আমরা কৃষি বিপণন থেকে নিয়মিত মনিটরিং করছি। কয়েক দিন আগে বীজের দোকানে অভিযান চালানো হয়েছিল। সেসময় কয়েকজনকে কৃষি বিপণন আইনে জরিমানাও করেছি। সেই সঙ্গে তাদের সতর্ক করা হয়েছে যেন অতিরিক্ত মূল্যে কেউ বীজ বিক্রি না করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, জেলায় এবার ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে আলুর বীজের চাহিদা রয়েছে ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। এরই মধ্যে দুই হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আলু বীজের কোনো সমস্যা নেই। কেউ যদি বেশি দামে বা নিম্নমানের আলু বিক্রি করছে এমন খবর আসে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।