লোকসানের মুখে গাংনীর ফুলকপি চাষিরা

95

অনুকূল আবাহওয়া আর প্রয়োজনীয় পরিচর্যায় মেহেরপুরের গাংনীতে ফুলকপির আবাদ ভালো হলেও তা রপ্তানি করতে না পারায় চাষিদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। বিশেষ করে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে বর্গাচাষিদের। উৎপাদন ব্যয় বেশি হলেও কপি বিক্রির অর্থ অনেক কম। কৃষি বিভাগ বলছে, চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ায় উৎপাদন ভালো হয়েছে। আর ব্যবসায়ী বলছেন, হরতাল ও অবরোধে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কপির দরপতন হয়েছে।

গাংনী কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২৫০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩০ হেক্টর বেশি। এখান মাটি ও আবহাওয়া দুই-ই সবজি চাষের উপযোগী। বিশেষ করে ফুলকপি দাম বেশি হওয়ায় চাষিরা এ আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। অনেকেই জমি লিজ ও বর্গা নিয়ে ফুলকপির আবাদ করছেন। বিষমুক্ত সবজি চাষে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

গাংনী উপজেলার সাহারবাটী গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমের দুই বিঘা জমিতে তিনি ফুলকপি আবাদ করেছেন। বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুলকপি রপ্তানি করা সম্ভব হলে উৎপাদন খরচের দ্বিগুন লাভ হতো। কিন্তু হরতাল ও অবরোধের কারণে কপি রপ্তানি করতে না পারায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ উঠছে না।

বর্গাচাষি নওপাড়া গ্রামের আক্তারুজ্জামান জানান, তিনি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ফুলকপি আবাদ করেছিলেন। লিজ খরচসহ মোট ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। আর সেই কপি বিক্রি হয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকায়। এতে মোটা অঙ্কের টাকা লোকসান হয়েছে তার। একই কথা জানালেন বর্গাচাষি সামীম হোসেন। তিনি দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে ফুলকপি আবাদ করেছিলেন। এক বিঘা জমির কপি ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাকি এক বিঘা কপির দাম হাঁকছেন ২০ হাজার টাকা। এতে মোটা অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হবে তাকে।

বামন্দী বাজারের কয়েকজন সবজী ব্যবসায়ী জানান, এমনিতেই ভরা মৌসুমে সবজির দাম কিছুটা কম থাকে। তার ওপর হরতাল ও অবরোধের কারণে কপি রপ্তানি করতে পারছে না চাষিরা, তাই দরপতন।

গাংনী কাঁচাবাজারের কয়েকজন আড়তদার জানান, হরতাল ও অবরোধের দুর্বৃত্তরা গাড়িতে আগুন লাগাতে পারে, এই ভয়ে গাড়ির মালিকরা গাড়ি চালাতে চাইছেন না। তাই সবজি রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় বাজারে ফুলকপির দাম কমে গেছে। এতে চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ইমরান হোসেন জানান, কৃষি অফিসের পক্ষে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। চাষিরা বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। বাম্পার ফলনও হয়েছে। তবে চাষিরা ফুলকপি রপ্তানি করতে না পারায় লোকসানের মুখে পড়েছে। এ সংকট কেটে গেলে চাষিরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে বলেও মন্তব্য করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।