দেশে সংরক্ষণের অভাবেই নষ্ট হয় ৩০ ভাগ পেঁয়াজ!

95

 

বাংলাদেশ তিন ধরনের পেঁয়াজ উত্পাদন করে। বাল্ব পেঁয়াজ (বারি পেঁয়াজ-১, বারি পেঁয়াজ-৪ এবং লালতীর কিং), অল্প পরিমাণ গ্রীষ্মকালীন বারি পেঁয়াজ-৫ এবং স্থানীয় জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এভাবে নানা জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেও চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে পেঁয়াজ নিয়ে সঠিক গবেষণা, সম্প্রসারণ, পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

২০১১-২০১২ হতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১০-১১ বছরে পেঁয়াজ উৎপাদিত জমির পরিমাণ ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৬ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।

অথচ এই উৎপাদিত পেঁয়াজের অন্তত ৩০ শতাংশ প্রায় অর্থাৎ ১০ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার কারণে মোট উৎপাদন থেকে কমে নিট উৎপাদন দাঁড়ায় প্রায় ২২ থেকে ২৩ টন। আমাদের চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন। বিপরীতে এই ১০ থেকে ১১ লাখ টন আমদানি করে মেটানো হয়।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে না পারায় আমদানি-নির্ভর হতে হচ্ছে। সঠিকভাবে সংরক্ষিত করা গেলে আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। পাশাপাশি আবাদ বৃদ্ধিতে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও ভালো মানের বীজ উৎপাদন করার পরামর্শও দিয়েছেন।

কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, আমদানি করা না হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদন ৪০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, আমদানি করা হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে আমদানি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, উৎপাদনের পর পেঁয়াজ শুকিয়ে যায়। এতে ওজন কমে যায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ। এটা স্বাভাবিক।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা বলছেন, পেঁয়াজ উৎপাদনের পাশাপাশি বাজার মনিটরিং করতে হবে। এখন কোনোভাবেই পেঁয়াজের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের যেসব জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়, সে সব জেলায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন না থাকায় আবাদে কৃষক আগ্রহী নয়। অথচ কোল্ড স্টোরেজ থাকলে নষ্ট হওয়া কমে যেত। আর এমন সুবিধা পেলে কৃষকরা আরও পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহী হতো।

সংরক্ষণাগার না থাকায় তারা দেশীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য যে তাপমাত্রা দরকার সেটা না পাওয়ায় পেঁয়াজ পচে যায়। সেই সঙ্গে অনেক সময় পেঁয়াজের গাছ গজিয়ে যায়। তখন তাদের লোকসানে পড়তে হয়। এ কারণে উৎপাদন মৌসুমে অনেক সময় কম দামে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন কৃষকরা। কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, গড়ে ৩০ শতাংশ অপচয় হলেও রাজশাহীতে উৎপাদনের প্রায় ৫০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যায় সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে যখন পেঁয়াজ মাঠ থেকে তোলা হয় তখন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। কোল্ড স্টোরেজে রাখতে হলে এর তাপমাত্রা মাইনাস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে। একটি কোল্ড স্টোরেজকে এই তাপমাত্রা নামিয়ে আনতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। এতে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হবে। যা ব্যয়বহুলও। তাই আমরা অন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছি। তিনি বলেন, কৃষকরা যেভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে সেভাবেই ১৩৩টি মডেল ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। একটা ঘরে এক মৌসুমে ১০ টন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এছাড়া আরও ১১২টি ঘর তৈরি করা হবে। সবমিলে ২৫০টি ঘরে ২ হাজার ৪৫০ টন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। তবে মোট উৎপাদনের তুলনায় এই সংরক্ষণ খুবই নগণ্য। তিনি জানান, এভাবে আরও মডেল ঘর তৈরি করা দরকার।