ভালো দামের আশায় বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলার ধুম

90

কয়েক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের বাজার ছিল চড়া। এ অবস্থায় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের চাষিরা অপরিপক্ব মুড়িকাটা পেঁয়াজ আগেভাগেই তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন। চাষিরা ভালো দাম পেলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই জেলার বালিয়াকান্দির বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মুড়িকাটা বাজারে আসায় এর প্রভাবে দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলায় মুড়িকাটা উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক হয় গোয়ালন্দে। কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজে লোকসান গুনছিলেন উজানচর ইউনিয়নের ফকিরাবাদের আরমান শেখ, জয়ধার, মানিকসহ কয়েকজন। তারা বলেন, গত বছর তাদের পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হওয়ার পর দাম বেড়েছিল। এবার বেশি দামে কিনতে হয়েছে পেঁয়াজের বীজ, সার ও কীটনাশক। কৃষি শ্রমিকের মজুরিও দিতে হয়েছে বেশি। ফলে আবাদে অন্যবারের তুলনায় খরচ অনেক বেশি হয়েছে।

বেশি দামের আশায় আগেই পেঁয়াজ তুলছেন একই গ্রামের মনোয়ারা বেগম। যদিও এতে ফলন কম হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৫-২০ দিন পর তুললে বিঘাপ্রতি ১৪-১৫ মণ বেশি হতো। তবে দাম কমে যাবে– এ আশঙ্কায় আগেই বিক্রি করছেন। ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা পেলে কোনো চাষিই অসময়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতেন না।

বুধবার উজানচরের গ্রামে গ্রামে দেখা গেছে, ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলার ধুম পড়েছে। কৃষক পরিবারের নারী-শিশুরাও তুমুল ব্যস্ত। ক্ষেতেই পরিষ্কার করা হচ্ছে পেঁয়াজ। সেখান থেকেই কিনে নিচ্ছেন পাইকার। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগের শুক্র-শনিবার প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। বুধবার এ দাম নেমে আসে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। গতকাল শনিবার অবশ্য বাজারে মণপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে গোয়ালন্দে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে আবাদ হয়েছে অন্তত ১০০ হেক্টর বেশি জমিতে। তিনি মনে করেন, আগেই পেঁয়াজ তুললেও প্রতি শতাংশে উৎপাদন ২০-২৫ কেজি কম হতে পারে। এখন মণপ্রতি যে দাম পাচ্ছেন, পরে কৃষক হয়তো দেড় মণেও এ দাম পাবেন না। তাই এভাবে পেঁয়াজ তোলায় সমস্যা দেখছেন না।

কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য, আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে সেই জমিতে আবারও হালি পেঁয়াজের আবাদ করতে পারবেন কৃষক। এতে পেঁয়াজের ঘাটতি পুষিয়ে যাবে বলে আশা করছেন।
বালিয়াকান্দির নারুয়া, বহরপুর, সোনাপুর, জামালপুর ও বালিয়াকান্দি বাজারে দেখা যায়, শনি ও রোববার যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকায়, তা মঙ্গল ও বুধবার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম এদিন ছিল ১২০ টাকা। গতকাল শনিবার বালিয়াকান্দি বাজারে পাইকারি দাম ছিল ৮০-৮৫ টাকা। খুচরা বিক্রি হয় ১১০-১২০ টাকা। হালি পেঁয়াজ পাইকারি ১১০ টাকা ও খুচরা ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বালিয়াকান্দি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সুজিত সাহা, আবদুল বারেক বিশ্বাস ও জামালপুর বাজারের ব্যবসায়ী মহিদুল মোল্লা বলেন, হঠাৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছিল। মুড়িকাটা উঠতে শুরু করায় দাম কমেছে। তারা এ পেঁয়াজ সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনছেন। ফলে কম দামে বিক্রি করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখানে উৎপাদিত মুড়িকাটা পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। কালুখালী থেকেই দিনে ৮-১০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১০ টন) পেঁয়াজ যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমাতে তিনি ভোক্তাদের পরামর্শ দেন পুরোনো পেঁয়াজ না কিনে নতুন পেঁয়াজ কিনতে। এতে কৃষক লাভবান হবেন।