মৌসুমের শুরুতেই তেতে উঠেছিল পেঁয়াজের বাজার। ফলে ভালো দামের আশায় ক্ষেতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু করেন অনেক কৃষক। আর মাত্র ৭০ দিনের মাথায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলন পান তারা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ওই কৃষকরা। ফলে কাঁচা টাকা আয় করেছেন তারা। এখন এসব জমিতে বোরো ধানের আবাদ শুরু করছেন কৃষকরা। খবর: বাসস।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, রবি মৌসুমে গোপালগঞ্জের কৃষকরা ৩৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেন। এসব জমিতে মাত্র ৭০ দিনে চার হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ওই পেয়াজের বিক্রি থেকে ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করেছেন কৃষকরা। এছাড়া বাজারে পেঁয়াজ কালির দামও ভালো ছিল। পেঁয়াজ কালি বিক্রি করেও ভাল টাকা আয় করেছেন তারা।
জেলার মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক ওবায়দুর রহমান বলেন, এই মৌসুমে পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত অতিক্রম করেছিল। আমার ১০০ শতাংশ জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করি। প্রতি শতাংশ জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে আমার খরচ হয় এক হাজার ৬০০ টাকা। শতাংশ প্রতি ৬০ কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলন পেয়েছি। প্রথম দিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। শেষের দিকে ওই পেঁয়াজ ৩০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গড়ে প্রতি শতাংশ জমি থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। এছাড়া প্রতি শতাংশ থেকে অন্তত ৫০০ টাকার কালি বিক্রি করেছি। মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে প্রতি শতাংশে আমার এক হাজার ৩০০ টাকা লাভ হয়েছে। সে হিসাবে ১০০ শতাংশ জমি থেকে আমার লাভ হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। মুড়িকাটা পেঁয়াজের পর এখন জমিতে বোরো ধানের আবাদ করছি।
জেলার কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দি গ্রামের কৃষক রবিউল মোল্লা বলেন, ৫২ শতাংশ জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করে অন্তত ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এখন এই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করছি। এই ৫২ শতাংশ জমিতে ব্রি’র উচ্চফলনশীল জাতের ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ আবাদ করছি। এখান থেকে অন্তত ৫২ মণ ধান পাব। পেঁয়াজের পর ধানের আবাদেও আমার লাভ থাকবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে চায়। সেই লক্ষ্যকে সামনে রখে আমরা কৃষিকে লাভজনক করতে কৃষককে দিয়ে অধিক ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করছি। এ বছর কৃষক মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। এভাবে এক ফসলি জমিকে আমরা দুই ফসলি এবং দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করছি। এতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান, ডালি, বস্তা পদ্ধতিসহ অন্যন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে।